তাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য চলাচলের রাস্তায় বেড়া দিয়েছি
গাইবান্ধা সদরের লক্ষ্মীপুরে জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরে কয়েকটি পরিবারের বাড়ির সামনে বেড়া দিয়েছে প্রতিপক্ষ এক প্রভাবশালী মহল। এতে আট দিন ধরে অবরুদ্ধ হয়ে আছে ভুক্তভোগী ওই পরিবারগুলোর নারী, পুরুষ ও শিশুরা।
পুরুষরা বাড়িতে প্রবেশের চেষ্টা করলে রোববার (২৪ অক্টোবর) তাদেরও কুপিয়ে জখম করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন সোমবার (২৫ অক্টোবর) থানায় মামলা হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে প্রতিপক্ষ প্রভাবশালী পাপুল ফকির ও তার লোকজন চলাচলের একমাত্র রাস্তা বন্ধ করে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে। এ অবস্থায় কয়েকটি পরিবারের নারী ও শিশুরা টানা আট দিন অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। পুরুষরা বাড়িতে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের ধারালো অস্ত্র দ্বারা কুপিয়ে জখম করা হয়। এতে পুরুষরা ভয়ে ও আতঙ্কে বাড়িতে প্রবেশ করতে না পেরে আত্মীয়স্বজনের বাসায় অবস্থান করছে।
স্থানীয়রা জানান, জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুপক্ষের বিরোধ চলে আসছে। কিছুদিন হলো পাপুল ফকির ও তার লোকজন ইয়াসির আরাফাতের পরিবারের সদস্যদের চলাচলের একমাত্র রাস্তা বন্ধ করে সেখানে বেড়া দিয়েছেন। স্থানীয়ভাবে কয়েকবার সালিস হলেও তা অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকা ভুক্তভোগী পরিবারের শামসুননাহার বেগম জানান, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ অবস্থায় আছি। আমাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। বাইরে বের হতে দিচ্ছে না। এমনকি বাজারও করতে পারছি না। মারপিটের ভয়ে পুরুষরা আতঙ্কে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে থাকছে। আমরা বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছি। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই।
বোনকে দেখতে এসে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া শিউলী বেগম জানান, আমার বোন অসুস্থ হওয়ায় তাকে দেখতে এসে আর বাড়ি যেতে পারিনি। অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছি। ওষুধপথ্য ও বাজারসদাই করার জন্য তারা বাইরে বের হতে দিচ্ছে না। খুব কষ্টের মধ্যে আছি। ছোট শিশুদেরও বের হতে দিচ্ছে না।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য সাদ্দাম হোসেন বলেন, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আমাদের বাড়িতে প্রবেশের একমাত্র রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। এক সপ্তাহ পার হলেও এখন বাড়িতে ঢুকতে পারিনি। রাস্তায় পাপুল ফকির ও তার লোকজন আমাদের ধারালো অস্ত্র ও লোহার রড দিয়ে মারপিট করেছে। কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। থানায় মামলা হলেও এখন কেউ গ্রেফতার হয়নি। এ অবস্থায় ন্যায়বিচার চেয়ে পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাদ্দাম।
ইয়াসির আরাফাত নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, নিজের বাড়ি থেকেও অন্যের বাড়িতে বাড়িতে থাকছি। ঠিকমতো পরিবারের খোঁজ নিতে পারছি না। আমার মা ডায়াবেটিসের রোগী। এক সপ্তাহ পার হলেও ওষুধ কিনে বাড়িতে পাঠাতে পারিনি। বাড়িতে ঢোকার জন্য এসেও আমি নিজেও মারপিটের শিকার হয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করলে উল্টো আমাদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন।
বিষয়টি জানতে প্রতিপক্ষ পাপুল ফকিরের বাড়িতে গেলেও তার দেখা পাওয়া যায়নি। তবে তিনি ঢাকা পোস্টকে মুঠোফোন বলেন, তারা আমার জমি দখল করেছে। তাই তাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য চলাচলের রাস্তায় বেড়া দিয়েছি। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারব না।
গাইবান্ধা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রউফ বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা নেওয়া হয়েছে। চলাচলের রাস্তা খুলে দেওয়ার জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হবে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
রিপন আকন্দ/এনএ