ছেলের বয়স ৫০, বাবার ৪৪!
মো. জামাত আলী। তার প্রকৃত বয়স ৭৫ হলেও জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার বর্তমান (২৩ অক্টোবর) বয়স ৪৪ বছর ২ মাস ২৯ দিন। জামাত আলীর ছেলে মো. মনিরুল ইসলামের বয়স ৫০ বছর। বাবার চেয়ে ছেলে ছয় বছরের বড়।
মো. জামাত আলীর জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য মতে, তার জন্ম ১৯৭৭ সালের ৪ আগস্ট। অন্যদিকে তার ছেলে মো. মনিরুল ইসলামের জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্ম তারিখ ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর লেখা আছে। সে হিসেবে বাবার ছয় বছর আগে ছেলের জন্ম হয়েছে! জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুলের কারণে জামাত আলীর বয়স্ক ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে।
বিজ্ঞাপন
জামান আলী চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের পূর্বপাড়ার মৃত উজির মণ্ডলের ছেলে।
গত ছয় বছর যাবত জামাত আলী বয়স্ক ভাতার আওয়াভুক্ত ছিলেন। গত বছরে উপজেলা সমাজসেবা অফিস তথ্য হালনাগাদের পর জাতীয় পরিচয়পত্র বয়স কম থাকায় তার ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। তখন ধরা পড়ে জামাত আলীর বয়স কম। সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী ৬৫ বছর হলেই পুরুষ বয়স্ক ভাতার আওতাভুক্ত হবেন। সেই অনুযায়ী ৬ বছর আগে হলে ৩৮ বছর থেকে জামাত আলী বয়স্ক ভাতার আওতাভুক্ত হয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা সমাজসেবা কার্যালয় বলছে, বয়স্ক ভাতার জন্য বয়স নির্ধারণটা জরুরি। এ জন্য ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে বয়স নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে কার্যক্রম অনলাইনে হওয়ার কারণে বয়স কম হওয়ায় বাদ পড়েছেন জামাত আলী।
এতো কম বয়সে কীভাবে জামাত আলী ভাতার আওতাভুক্ত হলেন তা জানতে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল গনী বলেন, আমার আগের ইউপি সদস্য ভালো বলতে পারবেন। আমার সময় তিনি ভাতার আওতাভুক্ত হননি। জামাত আলী আসলেই বয়স্ক। তিনি খুবই অসহায়। আমার ধারণা জামাত আলী নিজেই ভাতার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র জাল করে বয়স বাড়িয়ে জমা দিয়েছিলেন উপজেলা সমাজসেবা অফিসে। তখন সব কিছু অনলাইনে না থাকায় ভাতার আওতাভুক্ত হয়েছেন। এখন যাবতীয় কার্যক্রম অনলাইনে থাকায় তিনি বাদ পড়েছেন।
হাসাদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হাফিজুর রহমান বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুলের কারণে ছেলের জন্ম সাল বাবার জন্মের আগে দেখানো হয়েছে বলে এমনটি আমি জেনেছি। উনি ভাতা পেতেন কিনা জানি না। আমি খোঁজ নিয়ে দেখব বিষয়টি। আমার জানা মতে জামাত আলী একজন বয়স্ক ব্যক্তি৷ জাতীয় পরিচয়পত্র ভুলের কারণেই এমনটি হয়েছে। সংশোধন করে তিনি ভাতার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ভুক্তভোগী জামাত আলী বলেন, আমি গত ছয় বছর ধরে ভাতা পেয়েছি। গত বছর আমার ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। আমার ভোটার আইডিতে জন্ম তারিখ অনুযায়ী ছেলের বয়সের থেকে ছয় বছর কম হয়ে গেছে। আমার প্রকৃত বয়স ৭৫ বছর হলেও আইডি কার্ড অনুযায়ী বর্তমান বয়স মাত্র ৪৪ বছর। বয়স কম হওয়ার কারণে খুব সমস্যায় পড়েছি। এ আইডি কার্ড দিয়ে কোনো কাজ করতে পারছি না। বয়স্ক ভাতার কার্ডসহ সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি না। আইডি কার্ডে ভুলের কারণে পদে পদে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
জীবননগর উপজেলা নিবার্চন কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জানান, তথ্যগত ক্রটির জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রে এ সমস্যা হতে পারে। জামাত আলী জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন করলে অবশ্যই সংশোধন করে দেওয়া হবে।
চুয়াডাঙ্গা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সিদ্দিকা সোহেলী রশীদ বলেন, প্রতিটা ব্যক্তির জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা জন্ম সনদের মাধ্যমে বয়স নির্ধারণ করে ভাতার আওতাভুক্ত করার নিয়ম। জামাত আলী কীভাবে ভাতার আওতাভুক্ত হলেন তা আমি জানি না। শুধু চুয়াডাঙ্গাতেই নয়, পুরো দেশব্যাপী এই সমস্যার কারণে বয়স কম হওয়ায় অনেকের ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে আমাদের কার্যক্রম অনলাইনের মাধ্যমে হওয়ায় এমনটি ঘটছে।
আফজালুল হক/আরএআর