মাদারীপুরের বিদ্যালয়টি দেখতে ছুটছে সবাই
মাদারীপুর আড়িয়াল খাঁ নদীতীরবর্তী এলাকার চরাঞ্চলের বিদ্যালয়টি বর্তমানে জেলার সবচেয়ে সুন্দর প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত। কারণ এর চারপাশে রয়েছে নানা ফুলের বাগান। শিল্পীর রংতুলির ছোঁয়ায় ঝকঝক করছে দেয়াল। ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন চিত্রকর্ম। বিদ্যালয়ের চারপাশে মনের মাধুরি মেশানো এমন মনোমুগ্ধকর কাজ ও সৌন্দর্য মুগ্ধ করেছে মাদারীপুর জেলাবাসীকে। এতে দীর্ঘদিন বন্ধের পর বিদ্যালয়ের এমন পরিবেশ দেখে হতবাক শিক্ষার্থীরাও।
মাদারীপুর সদর উপজেলা ধুরাইল ইউনিয়নের উত্তর বিরঙ্গল (জালালপুর) গ্রামের ‘৬৯ নং উত্তর বিরঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ আড়িয়াল খাঁ নদীতীরবর্তী চরাঞ্চল এলাকায়। ১৯৪৩ সালে এটির যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে ৭৮ বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়েছে এটি। চরাঞ্চল ইউনিয়নটিতে হাজারো মানুষের প্রাথমিক শিক্ষার বাতিঘর হিসেবে খ্যাত এই বিদ্যালয়।
বিজ্ঞাপন
ইতোমধ্যে সরকার কর্তৃক পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট বিদ্যালয়ের একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়টিকে নতুনভাবে সাজিয়েছে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে বিদ্যালয়টি এখন জেলায় মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যালয়ের পারিপার্শ্বিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করেছে মাদারীপুর জেলাবাসীকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের সামনেই রয়েছে শেখ রাসেল কচিকাঁচা সড়ক ও বঙ্গবন্ধু পুষ্পকানন। বিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারে রয়েছে একটি দৃষ্টিনন্দন গেট। যেটি নিলকণ্ঠ ফুলগাছের লতায় মোড়ানো। নবনির্মিত বিদ্যালয় ভবনের দেয়ালের গায়ে রয়েছে রংতুলিতে আঁকা বিভিন্ন আলপনা, যা বিদ্যালটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। শ্রেণিকক্ষসহ বিভিন্ন স্থানে পবিত্র কোরআন, আল হাদিস, শ্রীমদ্ভগবদ গীতা, বেদ, উপনিষদ, মুনিঋষি ও সাহিত্যিকদের অমিয় সব বাণী লেখা রয়েছে রং-বেরঙের কালি দিয়ে।
ইংরেজি ও বাংলা বর্ণমালায় প্রাক-প্রাথমিকের কক্ষটিকেও করে তুলেছে আরও দৃষ্টিনন্দন। দ্বিতল ভবনের সিঁড়ির দুই পাশে লাগানো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি জুগিয়েছে প্রেরণা। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, বঙ্গবন্ধু কর্নার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, শহিদ মিনারসহ বিভিন্ন দৃশ্যসংবলিত ব্যতিক্রমধর্মী এসব উদ্যোগ জেলায় যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছে।
প্রতিদিন মাদারীপুরের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক মানুষ বিদ্যালয়টি দেখতে আসছেন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর বিদ্যালয়ের এমন পরিবেশ দেখে হতবাক শিক্ষার্থীরাও। এতে তারা এতদিনে হারানো উদ্দীপনা ফিরে পেয়েছে।
দীপা রানী মন্ডল ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। দায়িত্ব পাওয়ার পর সফলতার সঙ্গে বিদ্যালয়টি পরিচালিত করছেন। করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অবসরে বিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধন নিয়ে কাজ করার চিন্তা মাথায় আসে তার। বিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষকের মধ্যে একজন শিক্ষক মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় দুজন শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সহযোগিতায় স্কুলটি সাজিয়েছেন তারা মনের মতো করে।
সরকারি বরাদ্দ বাদেও নিজেদের অর্থ খরচ করে বিদ্যালয়টির উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন তারা। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে বিদ্যালয়ের আরও উন্নয়নমূলক কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। ‘প্রতিটি বিদ্যালয় দৃষ্টিনন্দন করে সাজিয়ে তোলার মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীরা করোনা-উত্তর বিদ্যালয়মুখী হবে, এমনটাই প্রত্যাশা সুশীল সমাজের।’
কথা হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। তারা বলে, আমাদের বিদ্যালয়টি অনেকে সুন্দর। এখানে খেলার মাঠ রয়েছে। ফুলের বাগান রয়েছে। দেয়ালে বিভিন্ন লেখা থাকায় আমরা বইয়ের বাইরেও অনেক কিছু শিখতে পারি। আমাদের বাড়ির বদলে বিদ্যালয়ে থাকতে বেশি ভালো লাগে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রধান শিক্ষক মনের মাধুরি মিশিয়ে বিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজ করছেন। তার উদ্যোগের কারণেই জেলার সবচেয়ে সুন্দর বিদ্যালয় হয়েছে এটি। আমাদের বিদ্যালয়ের সাজগোছ দেখে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় অনুপ্রাণিত হচ্ছে। তারা আগ্রহ নিয়ে বিদ্যালয়ে আসছে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীপা রানী মন্ডল বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি বিদ্যালয়টিকে মনের মতো সাজাব। সেই মোতাবেক কাজ করে যাচ্ছি। আমার যতটুকু সম্ভব সবটুকু দিয়ে বিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধন করে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মনোযোগী হতে বিদ্যালয়ে বিভিন্ন আলপনা, খেলাধুলার সামগ্রীসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছি।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আহাদুজ্জামান মৃধা বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীপা রানী মন্ডলের অক্লান্ত পরিশ্রমে বিদ্যালয়টি মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যালয়টি শিক্ষার আলোকবর্তিকা হয়ে এগিয়ে যাবে, এই কামনা করছি।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, এত চমৎকারভাবে বিদ্যালয়টিকে সাজানোর জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সব সদস্যকে। তা ছাড়া এই বিদ্যালয়ের মতো জেলার প্রতিটি বিদ্যালয়কে এমনভাবে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় আরও আগ্রহী হয়ে ওঠে।
এনএ