দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় রেড এলার্ট জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ভারত থেকে প্রচণ্ড গতিতে পানি আসায় এ ব্যারেজ হুমকির মুখে পড়েছে বলে জানা গেছে। পানির প্রবল চাপে ইতোমধ্যে তিস্তা ব্যারেজের ফ্লাড বাইপাসটি  ভেঙে গেছে।

তবে তিস্তা তীরবর্তী লোকজন অভিযোগ করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন আগে মাইকিং করে মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বললে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কম হতাম।

বুধবার (২০ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করে দেখা যায় তা বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে ভোর থেকে তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বিকেলে তা আবারও বাড়তে শুরু করে।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা তিস্তা ব্যারেজের সব গেট খুলে দিলেও পানির গতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ফলে তিস্তা পাড়ের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ফ্লাড বাইপাস ভেঙে গিয়ে লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কে পানি ছুঁই ছুঁই করছে। যেকোনো সময় পাকা সড়ক ভেঙে শহরে পানি ঢুকতে পারে বলে স্থানীয়রা ধারণা করছেন।

স্থানীয়রা জানান, উজানের পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গত ৫ দিনের ভারী বৃষ্টি। ফলে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার তিস্তা ও ধরলা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। এতে বেশি সমস্যায় পড়েছে শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীরা। পানির কারণে গবাদি পশুপাখি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চরাঞ্চলের খামারি ও চাষিরা।

উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারী বৃষ্টিতে সৃষ্ট এ বন্যায় পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ড, কুলাঘাট ও মোগলহাট ইউনিয়নের তিস্তা ও ধরলা নদীর চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসব ইউনিয়ের প্রায় ২০ হাজার পরিবার এখন পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন।

পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তার তীরবর্তী এলাকার ব্রিজ-কালভার্ট ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। ভেসে যাচ্ছে শত শত পুকুরের মাছ। নষ্ট হচ্ছে চাষিদের বাদাম, ভুট্টা ও সবজিসহ নানা ফসল।

চরাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষ শিশুখাদ্য ও নিরাপদ পানির সমস্যায় পড়েছেন। পানিবন্দী থাকলেও সরকারিভাবে কোনো ত্রাণ বা শুকনো খাবার পৌঁছানো হয়নি বলে তাদের অভিযোগ।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, পানির চাপে তিস্তা ফ্লাড বাইপাস ভেঙ্গে গেছে। এতে তিস্তার তীরবর্তী অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও ইউএনওদের মাধ্যমে বন্যা পরিস্থিতির খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফুদ্দৌলা বলেন, সকাল ৯টায় ওই পয়েন্টে ৬০ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয় এবং দুপুর ১২টায় বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ব্যারেজের ফ্লাড বাইপাসটি পানির চাপে ভেঙে গেছে। তিস্তার পানি ক্রমেই বাড়ছে। আরও কী পরিমাণ পানি আসতে পারে তা ধারণা করা যাচ্ছে না।

নিয়াজ আহমেদ সিপন/আরআই