পীরগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় উদ্রবাদী হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে সরকারি ত্রাণসহায়তা বিতরণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সোমবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের বটতলা বড় করিমপুর উত্তর মাঝিপাড়া গ্রাম পরিদর্শন শেষে ত্রাণসহায়তা প্রদান করা হয়। রংপুর জেলা ও পীরগঞ্জ প্রশাসনের উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে চাল, শাড়ি, লুঙ্গি ও কম্বল দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
সহায়তা প্রদানকালে জেলা প্রশাসক আসিব আহসান ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে দ্রুত সময়ের মধ্যে টিন ও নগদ অর্থসহ প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, এ দেশ হিন্দু-মুসলিম সবার। দেশের নাগরিক হিসেবে সব ধর্মের মানুষের সমান অধিকার রয়েছে। সবার নাগরিক অধিকার ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিতে সরকার কাজ করছে। ধর্মান্ধ উদ্রবাদীদের কারণে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা মেনে নেওয়ার মতো না।
এর আগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আবদুল ওয়াহাব ভূঞা, রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য, জেলা প্রশাসক আসিব আহসান ও পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এ সময় ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন তারা।
এদিকে প্রশাসন ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা খাদ্য ও বস্ত্রসহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনে থাকা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উই ফর দেম-এর প্রতিষ্ঠাতা জীবন ঘোষ জানান, সেখানকার গ্রামবাসীদের সহযোগিতা নেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৯০ জনের নামে তালিকা তৈরি করেছেন। মঙ্গলবার ওই সব লোকদের বস্ত্রসহায়তা দেবেন তারা।
পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিরোদা রানী রায় জানান, রোববার রাতে বটেরহাট মাঝিপাড়ায় সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে আরও সময় লাগবে। ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার সত্যতা যাচাই করাসহ যার বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ উঠেছে, সেই যুবককে খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার। তিনি জানান, ঘটনার পরপরই পুলিশ সুপার, র্যাব-১৩-এর অধিনায়ক, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। পুরো ঘটনা নিয়ন্ত্রণে সেখানে রাতভর উপস্থিত থাকেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
এসপি আরও বলেন, হামলাকারীদের কোনো ছাড় নেই। ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে অনেকের নাম-পরিচয় পেয়েছি। আমরা সবকিছু খতিয়ে দেখছি। হামলাকারীরা হানাদার বাহিনীর মতো বাড়িঘরে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছে। যারা এই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।
এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। পুলিশ এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪২ জনকে আটক করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এনএ