সাদা পাথরে গা ভিজিয়ে প্রশান্তি, ফেরার পথে ভোগান্তি
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের সাদা পাথরে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে যাওয়া পর্যটকরা নৌকা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। স্পট থেকে ফিরতে নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়। মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও মাঝিকে পাওয়া যায় না। তাছাড়াও রয়েছে নেটওয়ার্ক বিড়ম্বনা। সাদা পাথরের স্বচ্ছ জলে গা ভিজিয়ে যে প্রশান্তি আসে ফেরার পথে তা রূপ নেয় ভোগান্তিতে।
অন্যদিকে, সাদা পাথরে নৌকা পেতে ভোগান্তি ছাড়াও রয়েছে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য। নদীপথে মাত্র ১ কিলোমিটার পথে পর্যটকদের নৌকা ভাড়া গুনতে হয় আটশ টাকা। যাত্রীর সংখ্যাও আটজন। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে স্পটে গেলেও ফেরার পথে নৌকা নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিভিন্ন স্থান থেকে ঘুরতে আসা প্রকৃতিপ্রেমীরা।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোলাগঞ্জ ১০ নম্বর থেকে জিরো পয়েন্টে পর্যটকদের নামিয়ে দিয়ে ফের ঘাটে আসে ট্রিপ ধরতে। এতে করে ঘাটে লম্বা সিরিয়ালের গ্যাড়াকলে পড়তে হয় মাঝিদের। অপরদিকে ঘোরাফেরা শেষে জিরো পয়েন্ট স্পটে সেই মাঝির জন্য অপেক্ষায় বসে থাকেন পর্যটকরা।
ওই স্থানে বসার কোনো জায়গা না থাকায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দর্শনার্থীদের। তাছাড়া মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। অন্যদিকে অসংখ্য নৌকা থাকায় মাঝিকে শনাক্ত করতেও হিমশিম খেতে হয়। সব মিলিয়ে সাদা পাথর থেকে ফেরার পথে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় পর্যটকদের।
এদিকে অতিরিক্ত নৌকা ভাড়ার কারণে সাদা পাথর ঘুরতে আগ্রহ কমে যাচ্ছে অনেকের। মাত্র ৮-১০ মিনিটের নদীপথে নৌকাভাড়া ৮শ টাকা গুনতে হয় পর্যটকদের। এরমধ্যে আটজনের বেশি যাত্রী বহন করা হয় না। শিশুরাও আটজনের তালিকায়।
ফলে ঘুরতে আসা পর্যটক পরিবারের সদস্য আটজনের বেশি হলে আরেক নৌকা ভাড়া করতে হয়। তাছাড়া এক বা দুজন নৌকা ভাড়া করতে হলে পুরো ৮০০ টাকাই গুনতে হয়। অবশ্য কারো সঙ্গে যুক্ত হয়েও যাওয়া যায়। তবে এজন্য অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়।
গত শুক্রবার কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে আসা সামিউর রহমান বলেন, এক ঘণ্টা থেকে অপেক্ষা করছি। মাঝি বলছেন, আসতেছি। তপ্ত রোদে শিশু ও নারীদের নিয়ে বিপদে পড়েছি। এই সমস্যা নিরসনে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
সিলেট নগরের খাসদবির এলাকার বাসিন্দা আব্দুল লতিফ বলেন, সাদা পাথরের স্বচ্ছ জলে যে ক্লান্তি জুড়িয়েছিল মাঝির জন্য অপেক্ষা করতে করতে সেই প্রশান্তি বিরক্তিতে পরিণত হয়েছে। এই তপ্ত দুপুরে নৌকার জন্য অপেক্ষা চরম বিরক্তির। এটা রোধ করা দরকার।
তিনি বলেন, শুধু স্পটে যাওয়ার সময় নির্ধারিত নৌকায় যেতে হবে এবং আসার সময় যেকোনো নৌকায় আসা যাবে- কর্তৃপক্ষ এমন উদ্যোগ নিলে নৌকা নিয়ে পর্যটকদের দুর্ভোগ অনেকটা কমে যাবে।
ঢাকা থেকে সপরিবারে ঘুরতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, দেড় ঘণ্টা থেকে অপেক্ষা করছি। প্রথমে মুঠোফোনে নেটওয়ার্ক ছিল না। এখন মাঝি ফোন রিসিভ করছেন না। তাছাড়া এখানে বসারও কোনো সুযোগ নেই।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন আচার্য্য বলেন, এ বিষয়ে উপজেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটির সভায় আলোচনা করব। আমার একার পক্ষে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। তবে স্পট থেকে ফিরতে নৌকা পেতে ভোগান্তি সমাধান করা হবে।
তিনি বলেন, সাদা পাথর স্পট একেবারে জিরো পয়েন্টে। এখানে নৌকার ঘাটে বসার জায়গা করার সুযোগ নেই। তবে ১০ নম্বরে (যেখান থেকে নৌকায় যাত্রা শুরু) সেখানে সার জায়গাসহ শৌচাগার স্থাপন করার কাজ দ্রুত শুরু হবে।
এমএসআর