পরিবারের চারজনকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন লাকি
দীর্ঘদিন ধরে ভাই-ভাবি আর ভাতিজা-ভাতিজির সঙ্গে দেখা নেই লাকি আক্তারের। পরিবারের সবাই বাড়িতে আসবে— সেই অপেক্ষাতেই ছিলেন তিনি। তবে ভাগ্য তাকে টেনে আনল ত্রিশাল থানা চত্বরে। এখন তাকেই অপেক্ষা করতে হচ্ছে তাদের লাশের জন্য।
শনিবার (১৬ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে থানা চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের চারজনকে হারিয়ে এক গাছতলায় বসে বিলাপ করছেন নিহত ফজলুল হকের বোন লাকি আক্তার। কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
দিশেহারা হয়ে বারবার লাকি আক্তার বলছিলেন, ‘আমারে থুইয়া (রেখে) কই গেলা ও ভাই গো, ও ভাবি গো। এই মনেরে কী দিয়া বুঝামু গো আল্লাহ। চারজন মিইল্যা একলগে কই গেল গা।’
জানা গেছে, মানিকগঞ্জের সিংগাইর এলাকায় ভাড়া বাসায় সপরিবারে থাকতেন ময়মনসিংহের ফুলপুরের বাসিন্দা ফজলুল হক। সেখানে আচারের ব্যবসা করতেন তিনি। ব্যস্ততার কারণে গেল ঈদেও বাড়িতে আসা হয়নি।
তাই দীর্ঘদিন পর পরিবারের সবাই মিলে বাড়ি আসছিলেন তারা। তবে পথেই সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ফজলুল হক, তার স্ত্রী ও ২ ছেলেমেয়ে।
পরিবারের চারজন মারা গেলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছেন ফজলুল হকের চাচা রফিক মণ্ডল। তিনিও ওই এলাকায় থেকে ভাতিজার কাছ থেকে আচার নিয়ে বিক্রি করতেন। তিনিও ওই পরিবারের সঙ্গে একই বাসে করে বাড়িতে আসছিলেন।
রফিক মন্ডল বলেন, আমারও আজ বেঁচে থাকার কথা ছিল না। তাদের সঙ্গে বাসের পেছনের দিকে ছিলাম আমিও। তবে ভালুকা আসার পর সামনে একজন নেমে গেলে আমি সামনে চলে যাই। আর তাতেই প্রাণেই বেঁচে যাই আমি। আমি এখন থানায় অপেক্ষা করছি ভাতিজার পরিবারের লাশ নেওয়ার জন্য।
শনিবার দুপুর সোয়া তিনটার দিকে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার চেলেরঘাট এলাকায় ঘটে মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনা। এতে ওই পরিবারের চারজনসহ প্রাণ হারিয়েছেন সাতজন।
নিহতরা হলেন ময়মনসিংহের ফুলপুরের ফজলুল হক (৩৫), স্ত্রী ফাতেমা বেগম (২৮), ছেলে আবদুল্লাহ (৬) ও মেয়ে আকমিনা (৮), ভালুকা উপজেলার নিশিন্দা এলাকার হেলেনা আক্তার (৪০), শেরপুরের নকলা উপজেলার নজরুল (৫৫) ও মিরাজ (৩৫)।
জানা গেছে, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ময়মনসিংহগামী দুইটি বাস পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে দ্রুত গতিতে যাচ্ছিল। এদিকে চেলেরঘাট এলাকায় একটি ড্রাম ট্রাক দাঁড়ানো ছিল।
পাল্লা দিয়ে চলা দুটি বাসের মধ্যে একটি বাস ট্রাকটির পাশ দিয়ে চলে গেলেও শেরপুরের শ্যাপার এমএ রহিম পরিবহনের বাসটির পেছনের অংশ ট্রাককে ধাক্কা দেয়। এতে বাসটির পেছনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়।
এতে ঘটনাস্থলেই ৫ জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। মমেক হাসপাতালে আহত অবস্থায় বর্তমানে ১১ জন ভর্তি রয়েছেন। যাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইন উদ্দিন জানান, ঘটনার পর থেকে চালক পলাতক থাকলেও তাকে ধরতে অভিযান চলছে। এছাড়াও লাশ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
উবায়দুল হক/এমএসআর