ছোট একটি খালের ওপর অসহায় দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি

প্রায় পাঁচ বছর আগে শেষ হয়েছে সেতুর নির্মাণকাজ। তবে সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়ক না থাকায় কোনো কাজেই আসছে না ৫৬ লাখ টাকার নির্মিত এই সেতু। যেন ছোট একটি খালের ওপর অসহায় দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। আর এতে সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নবগ্রাম ও ঘিওর উপজেলার নালী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।

৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতুটির নির্মাণে ব্যয় হয় ৫৬ লাখ ৮৯ হাজার ১০৬ টাকা। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নবগ্রাম ও ঘিওর উপজেলার নালী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষের যাতায়াত-সুবিধার জন্য সেতুটি নির্মাণ করা হয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সেতু-কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের সরুপাই খালের ওপর নির্মাণ করা হয় সেতুটি। প্রায় পাঁচ বছর আগে ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল এই সেতু।

সরেজমিন দেখা যায়, সেতুর ওপর ধান শুকানোর কাজে ব্যস্ত সুরুপাই গ্রামের গৃহবধূ মীরজান বিবি। দুপাশে সংযোগ সড়কে মাটি না থাকার কারণে সাইকেল, রিকশা থেকে শুরু করে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। তারা ফিরে যাচ্ছে বিকল্প রাস্তার খোঁজে। নিরুপায় হয়ে কষ্টভোগ করে চলাচল করতে হচ্ছে সেতুর আশপাশের স্থানীয় বাসিন্দাদের। একপ্রকার ধান ও লাকড়ি শুকানোর কাজেই এখন ব্যবহৃত হচ্ছে।

এ বিষয়ে মীরজান বিবি বলেন, সরুপাই, বেরিরচর, উভাজানি, নয়ারচরসহ নবগ্রাম ও নালী ইউনিয়নের হাজারো মানুষ প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে এই সড়ক দিয়ে। তবে সেতুর গোড়ায় মাটি না থাকায় শুধু পথচারী যাতায়াত করে। কোনো প্রকার গাড়ি যাতায়াত করার উপায় নেই। আশপাশের গ্রামগুলোর সাধারণ মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য সেতুটি নির্মিত হলেও কোনো কাজে আসছে না এটি।

সেতুর দুই পাড়ে নেই সংযোগ সড়ক

সরুপাই এলাকার আয়নাল মিয়া বলেন, কৃষিজমি থেকে ধান, ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসল নিয়ে সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। বাড়ির পাশে এত বড় একটি সেতু থাকার পরও তা কোনো কাজে আসছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটি ব্যবহার উপযোগী করে দেওয়ার দাবি করেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা তানজিন জামান আঞ্জু বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুর সংযোগ সড়কে মাটি না ফেলেই চলে যায়। তারপর থেকেই অচল অবস্থায় পড়ে আছে এটি। ধান আর লাকড়ি শুকানো ছাড়া অন্য কোনো কাজে আসছে না সেতু।

এলাকাবাসী আরও জানান, এলাকায় কেউ অসুস্থ হয়ে গেলেও রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার দ্রুত কোনো উপায় নেই। এ ছাড়া সেতুর পাশে বিকল্প ভালো কোনো রাস্তাও নেই। সেতুটি জনসাধারণের জন্য চলাচল উপযোগী হলে এলাকাবাসী অনেক উপকৃত হবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

খোঁজখবর নিয়ে সেতুটিকে জনসাধারণের চলাচলের উপযোগী করা হবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, টিআর, কাবিখা বা অন্য যেকোনো বরাদ্দের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই সেতুর সংযোগ সড়কে মাটি ভরাটের কাজ সম্পন্ন করা হবে।

মো. জাহাঙ্গীর আলম, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও, অতিরিক্ত দায়িত্ব)

এ ব্যাপারে নবগ্রাম ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রাজা বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ওই সেতুর সংযোগে মাটি ফেলানোর কাজ নেন। কিন্তু এখনো সংযোগ সড়কে মাটি ভরাট করতে পারেননি। কয়েক দফায় বরাদ্দও পেয়েছেন শুনেছি। সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য সেতুর সংযোগ সড়কে মাটি ভরাটে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করি।

নবগ্রাম ইউপির সদস্য মো. হাবিবুর রহমান হাবু বলেন, সেতুটির সংযোগ সড়কে মাটি খুবই দরকার। অল্প কিছু মাটি ফেলা হয়েছে। আশপাশের লোকজন মাটি দিতে আগ্রহী নয়। যে কারণে ওই সেতুর সামনের অংশে মাটি ভরাটের কাজ করা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার দায়িত্বে থাকা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা পোস্টকে জানান, কয়েক দিন ধরে সদর উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। খোঁজখবর নিয়ে সেতুটিকে জনসাধারণের চলাচলের উপযোগী করা হবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, টিআর, কাবিখা বা অন্য যেকোনো বরাদ্দের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই সেতুর সংযোগ সড়কে মাটি ভরাটের কাজ সম্পন্ন করা হবে।

এনএ