যেভাবে বোনকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফেরালেন তিনি
করোনায় বিপর্যস্ত ছিল জনপদ। প্রতিদিনই বাড়ছিল সংক্রমণ। দীর্ঘ হচ্ছিল মৃতের সারি। বাড়ছিল স্বজন হারানো মানুষের হাহাকার। করোনা আক্রান্ত বড় বোনকে সঙ্গে করে সেই বিভীষিকাময় সময় পার করে এসেছেন কাজী জান্নাতুল ফেরদৌস (৫০)।
এই কঠিন সময়ে তিনি পাশে পেয়েছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) ও রাজশাহী মহানগর পুলিশকে (আরএমপি)। প্রতি ২০ মিনিটে একটি করে অক্সিজেন সিলিন্ডার সেবা নিয়ে এখন সুস্থ তার বড় বোন কাজী মিরা (৬০)। চার মাসের টানা জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়েছেন দুই বোন।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (১১ অক্টোবর) দুঃসময়ে পাশে থাকায় সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে নগর ভবনে ছুটে যান কাজী জান্নাতুল ফেরদৌস। কৃতজ্ঞতা জানান মহানগর পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিকের প্রতিও।
কাজী জান্নাতুল ফেরদৌস নগরীর হাদিরমোড় এলাকার বাসিন্দা। তাদের বাড়িতে পুরুষ অভিভাবক বলতে কেউ নেই।
কাজী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, গত ২১ জুন দিবাগত রাত ১২টায় আমার বোনের হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। তাৎক্ষণিক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা জানান, কোনো বেড খালি নেই। চিকিৎসকের পরামর্শে সেদিন বোনকে বাড়িতে নিয়ে আসি এবং আরএমপির হটলাইন নম্বরে কল করে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার পাই। পরদিন ২২ জুন তাকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করি। তার অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে পুনরায় ১১ জুলাই বাড়িতে নিয়ে আসি।
কিন্তু বাড়িতে ফিরে রোগীর অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। ১১ জুলাই থেকে ১৬ জুলাই রাসিক ও আরএমপি থেকে প্রায় ২০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বড় বোনকে বাঁচিয়ে রাখি। রাসিক ও আরএমপির হটলাইন নম্বরে মধ্যরাতে বা যখনই কল করেছি তখনই তারা বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়েছে। কখনো বিরক্ত হয়নি। যতবার চেয়েছি, ততবারই আমার ডাকে সাড়া দিয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতি ২০ থেকে ২৫ মিনিটে একটি করে সিলিন্ডার প্রয়োজন হচ্ছিল। এভাবে দীর্ঘ চার মাস সংগ্রাম করে বড় বোনকে মৃত্যুর কোল থেকে ফিরিয়ে এনেছি। বড় বোন এখন অনেকটাই সুস্থ, নিজে শ্বাস নিতে পারছে।
কাজী জান্নাতুল ফেরদৌস রাসিক মেয়র ও আরএমপি কমিশনারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ বলেন, জন্ম ও মৃত্যু আল্লাহর হাতে। তবে মেয়র মহোদয় ও আরএমপি কমিশনার মহোদয়ের এই অক্সিজেন সুবিধা না পেলে আমার বড় বোনকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব ছিল না। তারা বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা চালু করে এভাবে যে কতো মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন তা হয়তো জানেন না।
আমি যদি আজ না জানাতাম, আমার এই ঘটনাটিও তারা জানতেন না। যেসব পরিবার উপকৃত হয়েছেন তারাই জানেন, কতটা উপকার তারা পেয়েছেন। কারণ সে সময় দ্বিগুণ/তিনগুণ দামেও বাজারে অক্সিজেন সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছিল না।
শুধু কাজী জান্নাতুল ফেরদৌস নন, এই রকম আরও অনেক পরিবারের এমন গল্প আছে। করোনকালে মহানগরবাসীর দুঃসময়ে আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত ছিলেন রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন। দফায় দফায় খাদ্য, নগদ অর্থ, বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবাসহ বিভিন্ন মানবিক সেবা নিয়ে হাজির হয়েছেন তিনি। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে মানুষকে অব্যাহতভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন সিটি মেয়র লিটন।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএআর