বিএনপি নেতাকে নৌকার মনোনয়ন, ক্ষুব্ধ আ.লীগ নেতারা
আসন্ন দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ৮ নম্বর পাঙ্গাসী ইউনিয়নে এক বিএনপি নেতাকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর একটি চিঠি দিয়েছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। সেখানে ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের একটি প্রত্যয়নপত্রও সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
পাঙ্গাসী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোজাম্মেক হক ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, মনোনয়ন পাওয়া রফিকুল ইসলাম নান্নু ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটির কাগজ জাল করে নিজের নাম বসিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
অভিযোগ সূত্রে দেখা গেছে, পাঙ্গাসী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড দেউলমুড়া গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বার খানের ছেলে রফিকুল ইসলাম খান নান্নু আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। কিন্তু তিনি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য নয়, বরং ১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে আছেন। তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে আওয়ামী লীগের নয় বরং বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
পাঙ্গাসী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক, সহ-সভাপতি আব্দুল মজিদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. সুলতান মাহমুদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ৩০-৪০ বছরের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে রফিকুল ইসলাম খান নান্নুকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চরমভাবে হতাশ ও ক্ষুব্ধ। এ ঘটনায় সবাই নিন্দা প্রকাশ করছেন। এমন প্রার্থী নির্বাচিত হলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের আদর্শ বাস্তবায়ন করা মোটেও সম্ভব নয়। তার দলীয় মনোনয়ন বাতিল করে আওয়ামী লীগের ত্যাগী কোনো ব্যক্তিতে দেওয়ার অনুরোধ জানান তারা।
পাঙ্গাসী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতাম মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, যাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তিনি আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যও না। তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটির কাগজে ১৭ নম্বর সদস্যের নামের ওপরে টেম্পারিং (জাল) করে নিজের নাম বসিয়েছেন। তাই দলের সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর নান্নুর মনোনয়ন বাতিল ও নতুন করে দলের কাউকে মনোনয়ন দিতে আবেদন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পাঙ্গাসী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোজাম্মেক হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, রফিকুল ইসলাম খান নান্নুকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী ক্ষুব্ধ। এখন বিএনপির লোকজন আমাদের বলছেন, ‘তোমরা আমাদের দলের লোককে নৌকার মনোনয়ন দিলা।’ এছাড়াও তিনি ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটির কাগজ জাল করে সেখানে নিজেকে ১৭ নম্বর সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু সেই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জানিয়েছেন তিনি সেখানকার কোনো সদস্য না। এর প্রেক্ষিতে আমরা রোববার (১০ অক্টোবর) দলের দফতর সম্পাদকের মাধ্যমে দলের সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর নান্নুর মনোনয়ন বাতিল ও নতুন করে দলের কাউকে মনোনয়ন দিতে আবেদন করেছি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলাম নান্নু ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ সব অভিযোগ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক। আমাকে হেয় প্রতিপণ্ন করার জন্যই এগুলো করা হচ্ছে। ২০১৯ সালে থেকে আমি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটিতে সদস্য হিসেবেই আছি।
উল্লেখ্য, নির্বাচনের আগেই চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়ে কিছু দিন আগে তোরণ নির্মাণ করায় সমালোচনায় আসেন রফিকুল ইসলাম খান নান্নু। তবে পরে তিনি সেই তোরণ সংশোধন করেন।
শুভ কুমার ঘোষ/আরএআর