স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা নির্মাণ করছে গ্রামবাসী

হবিগঞ্জের বাহুবলে স্বেচ্ছাশ্রমে ও চাঁদা তুলে রাস্তা নির্মাণ করছে গ্রামবাসী। তাদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রবাসীরা। এক কিলোমিটার জুড়ে নতুন করে মাটি ভরাট করে এই রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে।

বাহুবল সদর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। শুকনো মৌসুমে গ্রাম থেকে উপজেলা সদরে আসতে গ্রামবাসীর কোনো সমস্যা না হলেও বর্ষার সময় অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভিজে বা নৌকায় যাতায়াত ছাড়া কোনো বিকল্প উপায় থাকে না। গ্রামের মাত্র এক কিলোমিটার রাস্তার জন্য অনেক স্থানে ঘুরাঘুরি করেছেন তারা। অবশেষে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করা হচ্ছে এক কিলোমিটার রাস্তা। 

প্রায় দুই লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন রাস্তা নির্মাণে একটি ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি উত্তোলন করে গ্রামের লোকজন সেই মাটি রাস্তায় নিয়ে ফেলছেন। এতে শিশু থেকে বয়স্করা সবাই অংশে নিয়েছেন। মাটি ভরাটের কাজ করতে প্রায় দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। 

প্রাথমিকভাবে মাটি ভরাটের কাজ চলছে

জানা গেছে, স্থানীয় ফনারআব্দা থেকে গোয়াহরি পর্যন্ত রাস্তায় মাটি ভরাটের কাজ গত বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) শুরু করেছে এলাকাবাসী। যে যার সামর্থ অনুযায়ী চাঁদা দিয়ে পার্শ্ববর্তী খাল থেকে ভেকু মেশিনের মাধ্যমে মাটি উত্তোলন করে ভরাট করছে। আবার কেউ নিজে স্বেচ্ছাশ্রমে মাথায় মাটি নিয়ে রাস্তায় ফেলে তৈরি করছেন নতুন রাস্তা। এমন দৃশ্য দেখে গ্রামের অনেককেই নিজ উদ্যোগে কাজে যোগদান করতে দেখা গেছে। 

গোয়াহরি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হক বলেন, আমরা ৩০ বছর ধরে এই রাস্তাটি নির্মাণের জন্য বহু স্থানে গিয়েছি। সবাই আশ্বাস দিলেও কেউ রাস্তা করে দেয়নি।  রাস্তা না হওয়া আমাদের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যাতায়াত করতে অনেক অসুবিধা হয়। বর্ষা মৌসুমে ভোগান্তির সীমা থাকে না। এখন গ্রামবাসী নিজেরাই নিজেদের অর্থায়নে নতুন রাস্ত তৈরি করতে কাজে লেগেছি।

একই গ্রামের আকবর আলী বলেন, আমরা এই রাস্তা নিয়ে অনেক কষ্ট করেছি। বর্ষার সময় পানি ভেঙে যাতায়াত করতে হয়েছে। এখন আমরা নিজেরাই মাটি ভরাট করে রাস্তা তৈরি করছি। আমাদেরকে অনেকেই সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ময়না মিয়া বলেন, গ্রামের যুবকরা সাহসী উদ্যোগ নেয়ার কারণেই সকলে মিলে রাস্তাটি তৈরি করছি। তাছাড়া আরও বহু বছর অপেক্ষা করতে হতো।  

গ্রামের নবজোয়ার তরুণ সংঘের সভাপতি আব্দুল জলিল বলেন, এই রাস্তা নিয়ে দীর্ঘদিন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছ। তাই আমরা যুবকরা প্রথমে উদ্যোগ  নিই নিজেদের অর্থায়নে গ্রামের রাস্তা তৈরি করবো। আমাদের উদ্যোগ দেখে গ্রামের সর্বস্তরের লোকজন ঝাঁপিয়ে পড়ে। যে যার সামর্থ অনুযায়ী চাঁদা দিয়ে আমাদের সহায়তা করেছে। 

তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে মাটি ভরাটের কাজ করছি। এ জন্য প্রায় দুই লাখ টাকা ব্যয় হবে। 

নবজোয়ার তরুণ সংঘের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল ইসলাম বলেন, আমাদের উদ্যোগ দেখে স্থানীয় অনেক জনপ্রতিনিধি ব্যক্তিগতভাবে আমাদের সহায়তা করছেন। পাশাপাশি গ্রামের সবাই এগিয়ে আসছেন। অনেকেই কাজ করেন কিন্তু পারিশ্রমিক নেন না। 

বাহুবল সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজমল হোসেন চৌধুরী  বলেন, সরকারিভাবে এ রাস্তাটি নির্মাণ করতে হলে অনেক অপেক্ষা করতে হতো। ব্যক্তিগতভাবে আমি গ্রামবাসীকে সহযোগিতা করছি। মাটি ভরাটের কাজ হয়ে গেলে শিগিররই প্রকল্পের মাধ্যমে রাস্তাটি পাকা করে দেওয়া হবে। 

আরএআর