বদলে যাচ্ছে মিঠাপুকুর ইকোপার্ক
বাহের দেশখ্যাত রংপুর। একটা সময় এ জেলা অবহেলিত ও মঙ্গাপীড়িত ছিল। এখন সেই রংপুর বদলে গেছে। উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে শহর-বন্দর, গ্রামে-গঞ্জে। কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে উপজেলা পর্যায়ের চিত্রও। তেমনি একটি উপজেলা মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়ার জন্মভূমি মিঠাপুকুর। দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে এই উপজেলাও বদলে যাচ্ছে। গ্রামীণ এ জনপদে সরকারিভাবে গড়ে উঠছে উপজেলার প্রথম ও একমাত্র পর্যটন এবং বিনোদনকেন্দ্র মিঠাপুকুর ইকোপার্ক।
উপজেলার শাল্টি গোপালপুরের শালবনকে ঘিরে গড়ে উঠা এই ইকোপার্কটিতে এখন অবকাঠামোগত উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে তৃতীয় ধাপের স্থাপনা উন্নয়ন। প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে সীমানা প্রাচীর। কাজও প্রায় অর্ধেক হয়েছে। বাকি কাজ দ্রুত শেষ করতে চলছে তোড়জোড়।
বিজ্ঞাপন
সামজিক বনবিভাগের ২২৬ একর এলাকাজুড়ে ২০১৩ সালে শুরু হয় ইকোপার্কের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ। ওই সময় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় পাকা সড়ক, ২০টি বেঞ্চ, দোলনা, পিকনিক স্পট, দর্শনার্থীদের বিশ্রাম কক্ষ, ওভারহেড পানির ট্যাঙ্ক, ছাতা, গোলঘর ও স্লিপার। পুরোপুরি নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই দর্শনার্থীদের আগাগোনা বেড়েছে এই পার্কে। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারিভাবে চাহিদা ধরা হয়েছে ১শ কোটি টাকা।
এদিকে, ২০১৩ সালের ১২ আগস্ট ইকোপার্কটি উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এইচএন আশিকুর রহমান। সেই থেকে সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও পার্কের কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হয়নি। এজন্য কিছুটা ক্ষোভ আর হতাশা বিরাজ রয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। তবে পার্ক ঘিরে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তারা। একই সঙ্গে এলাকার উন্নয়নেও বেশ খুশি এখনাকার বিনোদনপ্রেমীরা।
মিঠাপুকুরের অনেক অজপাড়াগাঁয়ের মাটির সরু রাস্তাগুলোও পিচঢালা। দুপাশে বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠ আর একটু পরপর সবুজের হাতছানি। গ্রামে এখন মাটির ঘর কমেছে। বেড়েছে টিনের বাড়ির পাশাপাশি ইট-বালুতে গড়া আধাপাকা বাড়ি। উপজেলা পর্যায়ের মানুষদের চিত্ত বিনোদনের জন্য গড়ে উঠা বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্রটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে স্থানীয় আর্থসামাজিক উন্নয়নে আরও ভূমিকা রাখবে।
সরেজমিনে ইকোপার্কে দেখা যায়, পার্কটিকে দৃষ্টিনন্দন করে সাজানোর প্রস্তুতি চলছে। ইতোমধ্যে সেখানে বেশি কিছু স্থাপনা ও অবকাঠামোর উন্নয়ন দৃশ্যমান। দু’ দফায় প্রায় এক কোটি টাকার বরাদ্দে নির্মাণ হয়েছে পার্ক অফিস ভবন, সামনের অংশের সীমানা প্রাচীর, টিকেট কাউন্টার, প্রবেশদ্বার, দোলনা, গণশৌচাগার, পানির ট্যাংক, বিশ্রামাগার, প্রসাধনী ও পিকনিক স্পট, রান্নাঘর, পার্কিং এলাকা, গোলঘর, ছাউনি ও বসার জন্য বেঞ্চ। এছাড়াও পার্কের ভেতর রয়েছে খনন করা ক্যানেল বিশিষ্ট একটি পুকুর। এখন চলছে তৃতীয় ধাপের স্থাপনা উন্নয়ন। প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে সীমানা প্রাচীর। যার কাজও প্রায় শেষের দিকে।
এখানে প্রায় ১৫০ বছরের পুরনো শাল গাছ রয়েছে। মাঝে মধ্যে বাঁশ ও বেত বাগান দিয়ে সাজানো হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও পাখি দেখা যায়। জাতীয় উদ্যান ঘোষণার পর শোভা বর্ধনকারী ও ভেষজ উদ্ভিদের বাগান করার কাজ চলছে।
সবুজের সমারোহ ভরা গাছগাছালির সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণে পার্কটি দর্শনার্থীদের কাটে টানবে। তবে পার্কের কার্যক্রম পুরোদমে চালু না হওয়াতে এখনও সেখানে বহিরাগতদের পাশাপাশি স্থানীয়রা ইচ্ছে মতো ঘোরাফেরা করতে পারছেন।
ইকোপার্কে জনসাধারণের জন্য এখনও উন্মুক্ত না হলেও বিভিন্ন দিবসগুলোতে ইকোপার্কে মানুষের ঢল নামে। ইতোমধ্যে একটি অজগর সাপ, তক্ষক ও একটি বন বিড়াল পার্কটিতে অবমুক্ত করা হয়েছে। তবে নিরাপত্তা স্বল্পতায় গহীন অরণ্যে জনসাধারণের প্রবেশে রয়েছে বিধিনিষেধ। বিভিন্ন দিবসে মেঠোপথে জনমানুষের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠে ইকোপার্কটি।
স্থানীয় বাসিন্দা সাকিব মন্ডল ও রকি মাহমুদ বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হয়েছে। ইকোপার্কের অনেক কাজ এখনও বাকি রয়েছে। দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করা দরকার। পার্কটি পুরোপুরি চালু হলে স্থানীয় অনেকের কর্মসংস্থান হবে। পাশাপাশি এখানে ব্যবসার পরিধিও বাড়ছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদ খাঁন বুলু বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল শালবনে ইকোপার্ক হবে। এমপি আশিকুর রহমান সাহেবের প্রচেষ্টায় আমরা ইকোপার্ক বাস্তবায়ন দেখতে পাচ্ছি। এখন প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনার্থী আসছেন। পিকনিক স্পটে পরিণত হয়েছে বিশাল এই শালবনটি। তবে পার্ক পুরোপুরি তৈরি করতে আরও বেশকিছু অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। তাহলে রংপুরের বাইরের পর্যটকরাও এখানে আসবেন।
স্থানীয় গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমিরুল কবীর দিলিপ পাইকার বলেন, তৃতীয় ধাপে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ সুষ্ঠুভাবে চলছে। অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হলে দৃষ্টিনন্দন হবে পার্কটি। এই ইকোপার্কটি পুরো মিঠাপুকুর উপজেলার মানুষের একমাত্র বিনোদনকেন্দ্র। এটাকে ঘিরে অনেক মানুষ কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখছেন। আশা করছি, পুরোদমে পার্ক চালু হলে এলাকার আর্থ-সামজিক উন্নয়নও দৃশ্যমান হবে। স্থানীয়দের পাশাপাশি বাইরের দর্শনার্থীরাও বেশি বেশি ঘুরতে আসবে।
মিঠাপুকুর আসনের সংসদ সদস্য এইচএন আশিকুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টায় এক সময়ের পিছিয়ে পড়া মিঠাপুকুর এখন উন্নয়নের দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মিঠাপুকুরের মানুষকে ইকোপার্ক উপহার দিয়েছেন। মানুষের বিনোদনের জন্য এটি গড়ে তোলা হচ্ছে। এখন সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ইকোপার্কের বেশির ভাগ দৃশ্যমান। বাকি কাজগুলো দ্রুত শেষ করা হবে।
যেভাবে যাবেন ইকোপার্কে
রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের মিঠাপুকুর থেকে পশ্চিমে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে গোপালপুর ইউনিয়নের মোসলেম বাজারের কাছে গোপালপুর শালবন। রংপুর শহর থেকে দর্শনা, মোসলেম বাজার হয়ে মিঠাপুকুর ইকোপার্কের দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার এবং ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) থেকে ৪০ কিলোমিটার।
বিভাগীয় শহর রংপুর থেকে বাসযোগে রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক মিঠাপুকুরে নেমে সিএনজি/অটোরিকশাযোগে যাতায়াত করা যায়। তাছাড়া রংপুর থেকে ফুলবাড়ী রাস্তায় দর্শনা হয়ে মোসলেম বাজার নেমে ভ্যান/অটোরিকশাযোগে মিঠাপুকুর ইকোপার্ক উদ্যানে যাতায়াতের সুব্যবস্থা রয়েছে।
এসপি