এবারও শিকদার বাড়িতে দেশের বৃহত্তম দুর্গোৎসব হচ্ছে না
বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়িতে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। প্রতিমার সংখ্যার দিক দিয়ে এই মণ্ডপকে এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সব থেকে বড় মন্ডপ বলেও দাবি করেন এর আয়োজকরা। কিন্তু করোনার কারণে ২০২০ সালে শিকদার বাড়িতে খুবই সীমিত পরিসরে পূজা উদযাপিত হয়েছিল। এ বছরও চেনা রঙে দেখা যাবে না সেই বর্ণিল আয়োজন। স্বল্প পরিসরে শুধুমাত্র জরুরি ধর্মীয় আচার রক্ষার্থে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতির কারণে শিকদার বাড়িতে এলাকার বাইরের দর্শনার্থীদের না আসার জন্যও অনুরোধ জানিয়েছেন আয়োজকরা।
২০১১ সাল থেকে শিকদার বাড়িতে ব্যক্তি উদ্যোগে দেশের বৃহত্তম দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। লিটন শিকদার নামে এক ব্যবসায়ী এই আয়োজন করে আসছেন। দিন দিন সেখানে প্রতিমার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ২০১৬ সালে প্রতিমার সংখ্যা ছিল ৬০১টি, ২০১৭ সালে ছিল ৬৫১টি, ২০১৮ সালে ৭০১টি এবং ২০১৯ সালে ৮০১টি প্রতিমা নিয়ে এই বাড়িতে পূজা উদযাপন হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে দুই বছর ধরে আয়োজন বন্ধ রেখেছে পরিবারটি।
স্থানীয়রা জানান, করোনার আগে থেকে কয়েক বছর ধরে শিকদার বাড়িতে দেশের সবচেয়ে বড় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই এলাকার ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই পূজার সময় এক হয়ে কাজ করেন। ওই কয়েক দিন এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বড় মিলনমেলায় রূপ নেয়। পূজামণ্ডপের আশপাশে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে বসে বিভিন্ন খাবার ও খেলনার পসরা। কিন্তু গত বছর করোনার কারণে এখানে স্বল্প পরিসরে পূজা হয়েছে। এবার আরও স্বল্প পরিসরে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। আমরা চাই করোনা যেন পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়, শিকদার বাড়িতে আবারও মিলন মেলা বসে।
বিজ্ঞাপন
শিকদার বাড়ি দুর্গাপূজার প্রধান প্রতিমা শিল্পী বিজয় ভাস্কর বলেন, শুরু থেকে আমরা এই বাড়িতে প্রতিমা তৈরি করি। প্রতি বছর পূজার ছয় মাস আগে আমরা প্রতিমা তৈরি ও সাজসজ্জার কাজ শুরু করি। কিন্তু এ বছর প্রতিমা তৈরির জন্য খুবই অল্প সময় লেগেছে। কারণ এ বছর শুধু মা দুর্গার প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। তবে এই সময়ে আমরা শিকদার বাড়িকে সাজানোর জন্য অনেক কাজ করেছি। শিকদার বাড়ির পুকুর ঘাট, প্রবেশ ফটক ও ভবনের সামনে একটি আকর্ষণীয় ভাস্কর্য তৈরি করেছি আমরা।
করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও বড় পরিসরে শিকদার বাড়িতে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজক লিটন শিকদারের ভাই শিশির কুমার শিকদার। তিনি বলেন, ২০১১ সাল থেকে আমরা বাড়িতে মহাধুমধামে পূজার আয়োজন করি। প্রতি বছর পূজা শুরুর ছয় মাস আগে থেকেই মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করি আমরা। কিন্তু এ বছর যখন প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করার সময় তখন দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। যার কারণে আমরা এ বছরও পূজার আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ প্রতি বছর পূজা দেখতে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে এই পূজামণ্ডপে। ফলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এই উৎসব করা সম্ভব হবে না। তবে সংক্ষিপ্ত পরিসরে পারিবারিকভাবে শুধু মা দুর্গার প্রতিমা সেট তৈরি করে পূজা-অর্চনা করা হবে।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বাগেরহাট জেলা সাধারণ সম্পাদক মিলন কুমার ব্যানার্জী বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে দেশের সবচেয়ে বেশি প্রতিমা নিয়ে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয় শিকদার বাড়িতে। করোনার কারণে গত বছর তেমন কোনো আয়োজন ছিল না ওই বাড়িতে। জনসমাগম এড়াতে এ বছরও বড় আয়োজন করছে না ওই পরিবার। আমরাও স্বাস্থ্যবিধি রক্ষার্থে অতিরিক্ত বড় আয়োজন করতে অনুৎসাহিত করেছি।
শিকদার বাড়িতে বড় পরিসরে পূজা না হলেও জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার তথ্য অনুয়ায়ী এ বছর বাগেরহাটের ৬২৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ১৮৮ পূজামণ্ডপকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, ২২০ মণ্ডপকে গুরুত্বপূর্ণ ও ২২৫ মণ্ডপকে সাধারণ হিসেবে বিবেচনা করছে পুলিশ। এ বছর চিতলমারী উপজেলায় সব থেকে বেশি ১৪৬টি মণ্ডপে পূজা উদযাপিত হবে। এসব মণ্ডপের নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা উদযাপনের জন্য প্রতি বছরের ন্যায় এবারও পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যরা কাজ করবেন।
তানজীম আহমেদ/আরএআর