দেবী দুর্গার আগমনে সেজেছে পূজামণ্ডপ
নদীর পাড় আর বিস্তৃর্ণ খোলা মাঠে কাশফুলের জেগে ওঠার আভাসই বলে দেয় শারদীয় দুর্গোৎসব আসন্ন। বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের অপেক্ষার পালা শেষ। দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় ধরে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় মাটি দিয়ে একেকটি প্রতিমা তৈরির কাজ শেষে এসেছে পূর্ণতা। কোথাও কোথাও শেষ বেলায় রঙ তুলির আঁচড়ে দেবীকে মূর্ত করে তোলার কাজে ব্যস্ত প্রতিমা কারিগররা। শৈল্পিক কারুকার্য আর রঙ তুলির নিপুণ ছোঁয়ায় সেজেছে অনিন্দ্য সুন্দর প্রতিমাগুলো।
গত বুধবার (৬ অক্টোবর) ভোর থেকে দেবীর আবাহনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল শারদীয় দুর্গাপূজার ক্ষণগণনা। মহালয়ার ছয় দিন পর শুরু হবে দেবী দুর্গার আরাধনা। সেই হিসেবে সোমবার (১১ অক্টোবর) দুর্গতিনাশিনী দশভুজা দেবীর মহাষষ্ঠী পূজা দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। ইতোমধ্যে মন্দিরে মন্দিরে প্রতিমা স্থাপন শুরু হয়েছে। এবার দেবী দুর্গা আসছেন ঘোড়ায় চড়ে, আর ফিরবেন দোলায়।
বিজ্ঞাপন
দুর্গোৎসবে মণ্ডপে মণ্ডপে বাজবে ঢাকের বোল, কাঁসার ঘণ্টা ও শাঁখের ধ্বনি। ভক্তদের আরাধনায় থাকবে অশুভ শক্তি বধের প্রার্থনা। পাঁচ দিনের এ উৎসবে সোমবার ষষ্ঠী আর পরদিন মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) সপ্তমী। বুধবার অষ্টমী, বৃহস্পতিবার নবমী ও শুক্রবার দশমীর দিন বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা। তবে এবারই ঢাকার পরে দেশের মধ্যে প্রথম শুভ মহালয়ার আয়োজন হয়েছে রংপুরের ডিমলা রাজ দেবোত্তর এস্টেটে।
এ বছর রংপুর জেলায় ৯৫৬টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে রংপুর মহানগরে ১৫৩টি, সদর উপজেলায় ১০২, বদরগঞ্জে ১৩২, মিঠাপুকুরে ১৪০, গংগাচড়ায় ১০৮, পীরগঞ্জে ৯৭, কাউনিয়াতে ৬৫, তারাগঞ্জে ৬৭, পীরগাছায় ৮৯টি মণ্ডপ রয়েছে। এছাড়াও মহানগর এলাকা বাদ দিয়ে পুরো রংপুর বিভাগের আট জেলায় ৫ হাজার ১৮৯টি পূজামণ্ডপ সেজেছে দূর্গা উৎসব আয়োজনে। এর মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপ রয়েছে ১ হাজার ৩১১টি। আর গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ১ হাজার ৩০৬টি পূজা মণ্ডপ। সাধারণ মণ্ডপ হিসেবে ২ হাজার ৫৭২টি পূজা মণ্ডপ চিহ্নিত করা হয়েছে।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা উদযাপন আয়োজন সম্পন্ন করতে প্রত্যেকটি মণ্ডপে শৃঙ্খলা কমিটির পাশাপাশি থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এবার বিভাগে দুর্গোৎসবে র্যাব ও পুলিশের পাশাপাশি ৩০ হাজারের বেশি আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছরের মতো এবারও পূজার আয়োজনে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি।
রংপুর নগরীর বিভিন্ন মন্দির ও পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, দেবী দুর্গার আগমনে চলছে ব্যাপক সাজসজ্জার প্রস্তুতি। প্রতিটি পূজামণ্ডপের জন্য দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, কার্তিক, গণেশ, অসুর, সিংহ, হাঁস, পেঁচা, সাপসহ বিভিন্ন ধরণের প্রতিমা প্রস্তুত করা হয়েছে। কোথাও কোথাও প্রতিমা রঙ করার কাজ শেষ পর্যায়ে। তবে শৃঙ্খলা রক্ষায় মণ্ডপে মণ্ডপে কমিটি গঠনের পাশাপাশি বৈরী আবহাওয়ার কথা চিন্তা করে অনেক মণ্ডপে ত্রিপলের ছাউনির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রংপুর সদর উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব সঞ্জিত কুমার বলেন, সবখানে করোনার প্রভাব পড়েছে। এবার বেড়েছে প্রতিমা কারিগরদের মজুরি। ভক্তরা সব কিছুকে ছাপিয়ে দুর্গাপূজা উদযাপনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। এখন শুধু দেবী দুর্গার আরাধনার আনুষ্ঠানিকতা বাকি।
নগরীর আনন্দময়ী সেবাশ্রম মন্দিরের পুরোহিত রিপন চক্রবর্তী জানান, দেবী দুর্গা এবার ঘোটকে চড়ে পৃথিবীতে এলেও দোলায় করে স্বর্গে ফিরে যাবেন। করোনা সংক্রমণ রোধে পূজা উদযাপন পরিষদ, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দুর্গাপূজার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
রংপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ধীমান ভট্টাচার্য বলেন, এবার রংপুরে ৯৫৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। প্রতিমা তৈরি, পূজা উদযাপন এবং প্রতিমা বিসর্জনসহ দুর্গাপূজার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিষদের সদস্যরা কাজ করছেন। এর পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও সতর্ক ও সজাগ রয়েছে।
রংপুর মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ধনজিৎ ঘোষ তাপস বলেন, দুর্গাপূজা যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয় সেজন্য জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা পাঁচ দিন ব্যাপী শারদীয় উৎসব পালন করব।
রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সার্বিক দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পূজা উদযাপন পরিষদের জেলা ও মহানগর কমিটির নেতাদের সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা উদযাপনের বিষয়টি নিয়েও মতবিনিময় করা হয়েছে। আশা করছি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে রংপুরে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দুর্গোৎসব উদযাপন করবেন।
রংপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ১১ অক্টোবর দুর্গাদেবীর বেলষষ্ঠী পূজা, ১২ অক্টোবর মহাসপ্তমী বিহিত পূজা, ১৩ অক্টোবর মহাষ্টমী, ১৪ অক্টোবর এক দিনে মহানবমী বিহিত পূজা এবং ১৫ অক্টোবর মহাদশমীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে করোনাকালের দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর