বানীতোষ চক্রবর্তী (৮০)। ডাকনাম বিজন। কেউ কেউ ডাকেন বিজন দা বলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে ১৯৬৮ সালে গোপালপুর সরকারি কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ২০০৪ সালে অবসরে যান। দীর্ঘ ৫৩ বছরের শিক্ষকতা জীবনে তার হাত ধরে বের হয়েছে শত শত শিক্ষক, বিচারপতি, সচিব, চিকিৎসকসহ সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। 

জানা গেছে, অধ্যাপক বানীতোষ চক্রবর্তী টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার ছাতিহাটী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গোপালদিঘী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিকুলেশন পাস করে করোটিয়া সাদত কলেজে ভর্তি হয়। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় মাস্টার্স করেন। ১৯৬৮ সালে গোপালপুর সরকারি কলেজে বাংলার শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। 

এরপর কয়েকবার ওই কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ ছাড়া তিনি কালিহাতীর শাজাহান সিরাজ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল, গোপালপুর বিএম উচ্চ বিদ্যালয়, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী উচ্চ বিদ্যালয়, পাবলিক ক্লাব ও গ্রন্থাগার, ডুবাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। 

বর্তমানে তিনি গোপালপুর উপজেলা সুশাসনের জন্য নাগরিকের সভাপতি, ডুবাইল কিন্ডার গার্টেনের প্রিন্সিপালসহ বিভিন্ন সংগঠনের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার ছাত্রের মধ্যে রয়েছেন- হাইকোর্টের বিচারপ্রতি এস এম মনিরুজ্জামান, অবসরপ্রাপ্ত সচিব নেপাল সরকার, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি গোপালপুর পৌরসভার ডুবাইল এলাকায় বসবাস করছেন। 

১৯৭১ সালে যুদ্ধের দুই সপ্তাহ আগে তিনি ডুবাইল গ্রামের মঞ্জু রানী দেবীকে বিয়ে করেন। ছাত্রজীবনে তিনি ছয় দফা আন্দোলনে যোগদান করেছিলেন। সে সময় আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমদের সঙ্গে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। 

তিনি একাধারে শিক্ষক, আবৃত্তিকার, অভিনেতা, খেলোয়ার, সমাজসেবক এবং বক্তা। বয়সের ভারে ন্যূজ হলেও এখনও তিনি খুব সুন্দর কণ্ঠে আবৃত্তি ও গান গাইতে পারেন। যদিও পুরোনো অনেক স্মৃতি তিনি এখন মনে করতে পারেন না।

অধ্যাপক বানীতোষ চক্রবর্তী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস ও বাংলায় চান্স পাই। তবে কবিতা আবৃত্তি আর নাটক করার কারণে এবং বাংলাটা ভালো লাগায় সে বিষয়ে ভর্তি হই। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ক্রীড়া সম্পাদক ছিলাম। মুজিব ছাত্রলীগের প্রথম কেবিনেট জগন্নাথ হলের ক্রীড়া সম্পাদক ছিলাম। সে সময় ভিপি ছিলেন টাঙ্গাইলের উৎপলেন্দু নন্দী। তোফায়েল আহমেম ছিলেন আমাদের সঙ্গে। 

এরপর ১৯৬৮ সালের ১৬ আগস্ট গোপালপুর সরকারি কলেজে বাংলার শিক্ষক হিসেবে যোগদান করলাম। কিন্তু কলেজের কোনো ঘর বা ভবন ছিল না। সিনিয়র হিসেবে প্রথম আমাকে যোগদানপত্র দেওয়া হয়। অনেক কষ্ট করে কলেজটি শুরু করেছিলাম। শিক্ষক হয়ে কেউ জন্মগ্রহণ করে না। শিক্ষক হতে হয়। 

তিনি বলেন, শিক্ষক কোনো চাকরি না, পয়সা রোজগার করে খাওয়ার জায়গাও না। এটা হলো একটা মানুষের রুচিবোধ, অধ্যবসায়, সাধনা। ছাত্রদের সামনে সাহিত্যর কথা বলা, তাদের মানুষ হওয়ার কথা বলা। যেটা সরকারি বা অন্য পেশায় থেকে বলা যায় না। কিন্তু শিক্ষক হিসেবে বলতে পারি। শিক্ষকতা জীবনের ৫৩ বছরে এখনও একটি কেজি স্কুলে শিক্ষকতা করি। এটা নেশায় পরিণত হয়েছে। তবে জীবনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম কোনো দিন প্রিন্সিপাল হব না। তবে সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান সিরাজ কলেজ করার জন্য আমাকে তার কলেজে প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল করার জন্য নিয়েছিল। কিন্তু তিন মাস পর অন্য একজনকে প্রিন্সিপাল বানিয়ে সেখান থেকে চলে আসছি।
 
তিনি বলেন, শিক্ষকতা জীবনে অনেক সম্মান অর্জন করেছি। আমার ছাত্ররা হাইকোর্টের বিচারপতি, সচিব, চিকিৎসক, অ্যাডভোকেট ও শিক্ষক হয়েছে। উপজেলায় বেশ কয়েকটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমার ছাত্র।

এসপি