প্রায় ৫০ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন রহিমা বেগম। চার ছেলে, চার মেয়েসহ বড় একটি পরিবারের দায়িত্বে ছিলেন রহিমা। কিন্তু বয়স যখন শত পার, তখন শরীর চলে না আর। সঙ্গে দায়িত্বভারও শেষ হয়। আস্তে আস্তে পরিবারের লোকজন হয়ে যায় আলাদা। কিন্তু বৃদ্ধ রহিমার বয়স যতই বাড়ছে, ততই যেন তার সময়টা জটিল হয়ে উঠেছে। সন্তানদের মাঝে শুরু হয় ভাগ-বাঁটোয়ারার গতানুগতিক ধারা।

হাজীগঞ্জ পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ড বলাখাল ওলিউল্ল্যাহ সর্দার বাড়ির মৃত হাবিবউল্ল্যাহ মুন্সীর স্ত্রী রহিমা বেগমের বর্তমান বয়স প্রায় ১৩০ বছর।

বৃদ্ধ রহিমা বেগমের বড় দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মৃত্যুকালে বয়স ছিল ৭০ থেকে ৮০ বছরের ওপরে। বর্তমানে দুই ছেলের মধ্যে সম্পত্তির জটিলতা দেখা দেয়। এ কারণে রহিমার জীবনেও দেখা দিয়েছে জটিলতা। স্বামীর মৃত্যুর পর ইচ্ছা করেই নেননি বিধবা বা বয়স্ক ভাতা।

রহিমার দুই মেয়ে শাহিদা ও নূরজাহান বেগম বলেন, আমাদের ভাই আবুল বাসার ও খলিলুর রহমানের মধ্যে জায়গা-জমিনের বিরোধ দেখা দেয়। এ কারণে মাকে নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছে। তার সেবা করার মতো যেন কারও সময় নাই। তারা এখন মামলায় জড়িয়ে মায়ের ব্যাপারে উদাসীন। তাই আমাদের মায়ের কোনো সেবযত্ন চলে না।

বৃদ্ধের ছেলে খলিলুর রহমানের বড় মেয়ে রাজিয়া সুলতানা বলেন, আমার জেঠা আবুল বাসার সুকৌশলে শত বছর বয়সী দাদির কাছ থেকে প্রায় ১৩ শতাংশ জায়গা লিখে নেন। আমার বাবা (খলিলুর রহমান) পরিবারের ছোট ছেলে হিসেবে দাদার ঘর পেয়ে মেরামত করেছেন। কিন্তু গত মাসে আমার জেঠা (আবুল বাসার) ও তার ছেলে নুরে আলম জোর করে দাদার দেওয়া ঘর উচ্ছেদ করেন। সেখানে নতুন ঘর তৈরি করে দখল করেন।

স্থানীয়ভাবে কয়েকবার বসার পরও তারা বলেন, আমরা নাকি কোনো জায়গাজমি পাব না। অথচ ফুফুদের কাছ থেকে ওয়ারিশ সম্পত্তি ৬ শতাংশ ও দাদার সম্পত্তির পাওনা ৪ শতাংশ আমার জেঠা জোর করে ভোগদখল করে আসছেন। তাই বাধ্য হয়ে থানায় অভিযোগ করেছি। কিন্তু দাদির খোঁজখবর নেওয়ার জন্য স্বামীর বাড়ি থেকে এসে এই ঘরে উঠেছি। কিন্তু জেঠা বিদ্যুতের সংযোগটি পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে আবুল বাসার বলেন, বৃদ্ধ মা আমার ঘরে থাকেন, খান, তা সবাই জানে। মায়ের নিজ অংশ থেকে কিছু সম্পত্তি আমাকে দান করেছেন। আমার ভাই খলিলুর রহমান মায়ের কোনো খোঁজখবর নেন না।

স্থানীয় কাউন্সিলর মাঈনুদ্দিন মিজি বলেন, এই পরিবারের ১৩০ বছর বয়সী বৃদ্ধ মায়ের সন্তানরা যে যার মতো জীবন যাপন করছেন। দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্বের কারণে মায়ের সেবায় বিঘ্ন ঘটছে। আমি নিজ উদ্যোগেও তাদের সঙ্গে বসার আহ্বান করেছি।

শরীফুল ইসলাম/এনএ