চলতি বছরের বন্যায় মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলায় ৩৬ হাজার ৬৭৩ হেক্টর জমিতে রোপা ও বোনা আমন ধানের চাষাবাদ করা হয়। বন্যায় শাকসবজির তেমন ক্ষতি না হলেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে রোপা ও আমন ধানের। যার কারণে জেলার ৩০ হাজার ১২৮ জন আমন চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

জমি থেকে বন্যার পানি নামার পরপরই দৃশ্যমান হয় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। বন্যার পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যায় আবাদ করা এসব আমন ধান। এতে লোকসানের শঙ্কা করছেন আমন চাষিরা। সরকারিভাবে প্রণোদনা বা সহজশর্তে ঋণ পেলে চাষাবাদ করে ক্ষতির কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন চাষিরা।

মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৬ হাজার ৬৭৩ হেক্টর জমিতে রোপা ও বোনা আমন ধানের চাষাবাদ করেন চাষিরা। এরমধ্যে ৯ হাজার ৫৪০ হেক্টর রোপা এবং ২৭ হাজার ১৩৩ হেক্টর জমিতে বোনা আমন ধান। 

গেল বন্যায় ২ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমির রোপা ধান তলিয়ে যায়। এতে ৯২২ হেক্টর জমির সম্পূর্ণ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ১ হাজার ৭১৩ হেক্টর জমির ধান আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে ৯ হাজার ২০ হেক্টর জমির বোনা আমন ধান বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়।

এতে ১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমির বোনা ধান সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ৭ হাজার ২২০ হেক্টর জমির আমন ধানে আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবারের বন্যায় জেলায় কৃষিখাতে ২৯ কোটি ২৮ লাখ টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় জেলা কৃষি অধিদফতর। 

শিবালয় উপজেলার শাকরাইল গ্রামের আমন চাষি লুৎফর বলেন, চলতি মৌসুমে প্রায় সাত বিঘা জমিতে রোপা ও দুই বিঘা জমিতে বোনা আমন চাষাবাদ করেছি। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার টাকা। কিন্তু বন্যার পানিতে জমির ধানগুলো তলিয়ে যাওয়ায় পুরোটাই লোকসান হবে।

ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরি গ্রামের কৃষক আকবর মিয়া বলেন, প্রতিবছরই রোপা ও বোনা আমন ধানের চাষ করি। এ বছরও প্রায় ৮ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষাবাদ করছি। বন্যায় প্রায় চার বিঘার ধান নষ্ট হয়েছে। এতে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা লোকসান হবে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা বা সহজশর্তে ঋণের দাবি করেন তিনি।

একই গ্রামের কৃষক গোবিন্দ বলেন, ‘প্রতিবছরই বন্যায় কৃষকরা কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু আমরা সরকারিভাবে তেমন কিছু পাই না। জমিতে থ্যাইকা পানি নামতাছে। বন্যায় এবার যে ক্ষতি হইছে তা পুষায়ে নিতে পারমু কি না বলতে পারছি না? তয় সরকার আমাগো স্বল্প সুদে ঋণ দিলে অন্য ফসল চাষাবাদ করে আমনের ক্ষতিটা কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারব।’

মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শাহজাহান আলী বিশ্বাস বলেন, বন্যায় জেলায় ২৯ কোটি ২৮ লাখ টাকার ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের তালিকা করে ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে কোনো প্রণোদনা বরাদ্দ পেলে নিয়মানুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের দেওয়া হবে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা সহজশর্তে ব্যাংক থেকে ঋণও নিতে পারবেন।

সোহেল হোসেন/এমএসআর