পা দিয়ে লিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন সুরাইয়া জাহান

শেরপুরের মেয়ে সুরাইয়া জাহান। হাত অকেজো। অস্পষ্ট তার ভাষা। তাকে ভাববিনিময় করতে হয় চোখের ইশারায়। তবে স্বপ্ন তার আকাশ ছোঁয়া। তাইতো কোনো প্রতিবন্ধকতাই সুরাইয়াকে দমাতে পারেনি। সেই প্রমাণও মিলল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি)। অন্য সব শিক্ষার্থীর মতো চেয়ার-বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দিতে না পারলেও তিনি অংশ নিয়েছেন ভর্তিযুদ্ধে। স্বপ্ন পূরণের জন্য পা দিয়ে লিখে অদম্য এই মেয়েটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন।

শনিবার (০২ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে মাকে সঙ্গে নিয়ে শেরপুর থেকে বাকৃবির কেন্দ্রে আসেন সুরাইয়া। কৃষি অনুষদের কীটতত্ত্ব বিভাগের ল্যাবরেটরির কক্ষের মেঝেতে বসে পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। এই কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ছিলেন ৩৫ জন।

সুরাইয়া জাহান

মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও তাকে দমে যেতে দেয়নি পরিবার। শত সংগ্রামের পরও মেয়ের ইচ্ছা পূরণে স্বপ্নসারথি হয়ে আছেন মা মুর্শিদা ছফির। ভেতরে যখন মেয়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন, তখন বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন মা মুর্শিদা ছফির। বেলা ১১টা থেকে টানা দেড় ঘণ্টা চলে ভর্তি পরীক্ষা। একে একে সব শিক্ষার্থী হল থেকে বের হওয়ার পর পরীক্ষার হল ছাড়েন সুরাইয়া।

সুরাইয়ার মা মুর্শিদা ছফির বলেন, তিন মেয়ের মধ্যে সুরাইয়া প্রথম। মেয়েটা জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। কিন্তু আমি কখনই সেটার জন্য মন খারাপ করিনি। মেয়েকে নিয়ে আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনের গল্পটাও সংগ্রামের। আমি চাই যে আমি যতদিন বেঁচে আছি ততদিন তার এগিয়ে যাওয়ার পথে সঙ্গী হয়ে থাকব। আমার আশা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় মেয়ে উত্তীর্ণ হবে এবং একদিন বড় অফিসার হবে।

মায়ের সঙ্গে সুরাইয়া 

জানা গেছে, সুরাইয়া এসএসসিতে জিপিএ ৪.১১ এবং এইচএসসিতে জিপিএ ৪.০০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তার গ্রামের বাড়ি শেরপুর সদর উপজেলায়। বাবা পেশায় একজন শিক্ষক।

উল্লেখ্য, ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, শেরপুর ছাড়াও ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলার শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কেন্দ্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। 

আরএআর