জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে দেশসেরা নাটোর
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রমে দেশ সেরা হয়েছে নাটোর। দেশের শ্রেষ্ঠ জেলা হিসেবে নাটোর ও শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন হিসেবে জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়ন এবং প্রশাসনিক বিভাগ পর্যায়ে একই উপজেলার বিয়াঘাট ইউনিয়নকে স্থানীয় সরকার বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় এ স্বীকৃতি প্রদান করেছে।
আগামী ৬ অক্টোবর রাজধানীতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নাটোরের জেলা প্রশাসক এবং সংশ্লিষ্ট দু’ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে সনদ ও ক্রেস্ট গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
জেলার মোট জনসংখ্যা ১৯ লাখ ৮৪ হাজার ৭৯ জন। জানুয়ারি থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত ছয় মাসে জনসংখ্যা অনুযায়ী প্রত্যাশিত জন্ম নিবন্ধন সংখ্যা ১৭ হাজার ৮৫৭ এর বিপরীতে জেলায় মোট নিবন্ধিত শিশুর সংখ্যা ছয় হাজার ৬২২ জন-যা ৩৭ শতাংশ। আবার একই সময়ে প্রত্যাশিত মৃত্যুর সংখ্যা চার হাজার ৯৬০ এর বিপরীতে মৃত্যু নিবন্ধন হয়েছে ২ হাজার ৫১৯ জন-যা ৫১ শতাংশ। অর্থাৎ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের গড় ৪৩.৯৩ যা ছিলো সারাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ।
চলতি বছরের আগস্টে জেলায় প্রত্যাশিত দুই হাজার ৫০৮ জন্ম নিবন্ধনের বিপরীতে জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে নিবন্ধনকৃত শিশুর সংখ্যা এক হাজার ২৫২, এক বছর বয়সের মধ্যে নিবন্ধিত শিশুর সংখ্যা ১ হাজার ৮৫১ এবং ১ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে নিবন্ধিত শিশুর সংখ্যা ৪ হাজার ৭৮০। ওই সময়ে দেশ সেরা ধারাবারিষায় প্রত্যাশিত জন্ম নিবন্ধনের সংখ্যা ৫৩ নির্ধারণ করা হলেও এক বছর বয়সের মধ্যে ১৪৬ শিশু এবং এক বছর বয়সের ঊর্ধ্বে ১৮৩ শিশুর নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে। রাজশাহী বিভাগ সেরা বিয়াঘাট ইউনিয়নে আগস্ট মাসে প্রত্যাশিত ৪১ শিশুর নিবন্ধন হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও এক বছর বয়সী ৭৫ শিশু এবং এক বছরের ঊর্ধ্ব বয়সী ২৬ শিশু নিবন্ধিত হয়েছে।
আগস্ট মাসে ৬৯৭ ব্যক্তির সম্ভাব্য মৃত্যুর সংখ্যা নির্ধারণ করা হলেও জেলায় মোট মৃত্যুর নিবন্ধন হয়েছে ৯৬৭ জনের। এর মধ্যে মৃত্যুর এক বছরের মধ্যে নিবন্ধন হয়েছে ৭৮৩ এবং মৃত্যুর এক বছরের বেশি সময় পরে আগস্ট মাসে নিবন্ধিত মৃত্যুর সংখ্যা ১৮৪। একই সময়ে ধারাবারিষা ইউনিয়নের সম্ভাব্য ১৫ মৃত্যুর বিপরীতে মোট নিবন্ধিত মৃত্যুর সংখ্যা ৩৯ এবং বিয়াঘাট ইউনিয়নে সম্ভাব্য ১১ মৃত্যুর বিপরীতে মোট নিবন্ধিত মৃত্যুর সংখ্যা ১৭।
প্রশাসন আর জনপ্রতিনিধিদের সম্মিলিত ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফসল নাটোর জেলার এ অর্জন। এ টিমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন জেলা প্রশাসক, সাত উপজেলার নির্বাহী অফিসারবৃন্দ, ৫২ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ৮টি পৌরসভার মেয়রবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট দফতরে কর্মরত ব্যক্তিরা। তবে ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা এবং গ্রাম পুলিশের ভূমিকা অগ্রগণ্য। এসব ব্যক্তিদের পাশাপাশি নাটোরের স্থানীয় সরকার বিভাগের সদ্য বদলি হওয়া উপ পরিচালক মো. গোলাম রাব্বীর অবদানও অসামান্য। মূলত তিনিই স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে একটি টিমের মতো সাজিয়ে নিয়মিত নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি নাটোরের এই অনন্য অর্জনের বাতিঘর।
দেশ সেরা গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মতিন জানান, সময়মত জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কাজ সমাধা করতে ইউনয়ন পরিষদের মেম্বার ও সচিব, ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা, গ্রাম পুলিশ সবাই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছেন। ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে আমরা ফ্রি নিবন্ধন ক্যাম্পও আয়োজন করেছি। এই অর্জন ভবিষ্যতে আমাদের পথচলাকে আরো বেগবান করবে।
গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তমাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সেবা প্রদানের সময় জনসাধারণকে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং নিবন্ধন কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধি, সচিব, গ্রাম পুলিশ ও উদ্যোক্তাদের কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘নাগরিক অধিকার করতে সুরক্ষণ ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন’ শ্লোগানে ফ্রি ক্যাম্প আয়োজন করেছে এবং নিবন্ধিত শিশুকে উপহার প্রদান করেছে। এসব ক্যাম্পে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার ছাড়াও জেলা প্রশাসক উপস্থিত থেকেছেন। নিবন্ধন কার্যক্রমের সহায়ক সকল উদ্যোগে সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহণের ফলে আমাদের এ অর্জন।
নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিবৃন্দের দায়িত্বশীল এবং আন্তরিকতাপূর্ণ ভূমিকার কারণে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যক্রমে নাটোর জেলা এবং জেলার দুইটি ইউনিয়ন জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। জন্ম নিবন্ধন শিশুর প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। এ সনদ ছাড়া স্কুলে ভর্তি, ব্যাংক একাউন্ট খোলা, শিশু শ্রম প্রতিরোধ, বাল্যবিয়ে রোধসহ সব ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন। তাই যথাসময়ে নিবন্ধন কাজ সম্পন্ন করতে প্রশাসনিক উদ্যোগ অব্যাহত রাখা হবে।
তাপস কুমার/আরআই