ক্ষোভে বাগানের ১০৭ নারিকেল গাছ কাটলেন জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক
ছয় বছরেও ফলন না পেয়ে রাগে-ক্ষোভে নিজের বাগানের ১০৭টি ভিয়েতনামি খাটো জাতের নারিকেল গাছ কেটে ফেলেছেন নাটোরের স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত সফল উদ্যোক্তা ও গবেষক সেলিম রেজা। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হর্টিকালচার বিভাগ বলছে, সঠিক পরিচর্যা না করায় গাছে ফল আসেনি।
বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে সদর উপজেলার আহমেদপুর এলাকায় গাছ কাটার ঘটনা ঘটে। প্রায় ছয় বছর আগে সোয়া দুই বিঘা জমিতে নারিকেল বাগান গড়ে তুলেছিলেন সেলিম রেজা।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, ভিয়েতনামি খাটো জাতের নারিকেল গাছে ২৪ মাসের মধ্যে ফল ধরার কথা থাকলেও ফলন তো হয়নি বরং গাছের গোড়ায় ধরেছে পচন। ফলে ক্ষোভে গাছগুলো কাটেন পেয়ারা চাষি জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সফল উদ্যোক্তা ও গবেষক সেলিম রেজা। বৃহস্পতিবার সারা দিন আটজন শ্রমিক দিয়ে তিনি তার খামারের এসব বিদেশি নারকেল গাছ কেটে ফেলেন।
সেলিম রেজা ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুনাফালোভী একটি চক্র ভিয়েতনামি খাটো জাতের নারিকেলের চারা এ দেশে আমদানি করেন। পরে তারা আকর্ষণীয় ছবিসহ চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে কৃষি উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করেন। চারা বিক্রি করে তারা মুনাফা লুটে নেয়। ভিয়েতনামের খাটো জাতের এই নারিকেল গাছে ফলন হয় না। বরং নানা রোগ জীবাণু ছড়িয়ে মাটি ও আবহাওয়ার ক্ষতি করে। দুই বছরের মধ্যে ফল ধরার কথা থাকলেও ছয় বছর ধরে গাছগুলোতে কোনো ফর আসেনি।
তিনি আরও জানান, চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে কোনো উদ্যোক্তা যেন প্রতারিত না হয় সেজন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। কোন গাছ এ দেশের আবহাওয়া উপযোগী তা জেনে গাছ লাগাতে হবে।
সাধারণ চাষিরা বলছেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সফলতা প্রাপ্তি সাপেক্ষে এসব চারা বিক্রি করা দরকার। তাছাড়া কোনো নীতিমালা না থাকায় কোনো প্রতিকারও হয় না। ফলে নার্সারিসহ অনলাইনে চারা বিক্রেতারা লাভের টাকা হাতিয়ে নিলেও ধ্বংস হচ্ছে দেশের কৃষি খাতের একটা বড় অংশ। দেশের সম্ভাবনাময় অনেক লাভজনক পরীক্ষিত দেশি-বিদেশি জাত রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে সরকারিভাবে কৃষকদের সচেতন করা দরকার। কেউ যেন ইচ্ছে মতো ফেসবুক, ইউটিউবে যেকোনো বিদেশি চারার বিজ্ঞাপন দিতে না পারে সেই আইনও থাকা দরকার মনে করেন এসব চাষিরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হর্টিকালচার সেন্টার নাটোরের উপ-পরিচালক মাহমুদুল ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোপণের সময় থেকে ২৪ মাস ঠিকমতো খাবার সরবরাহ করলে ভিয়েতনামি নারিকেল গাছে ২৪ মাসেই ফলন হয়। বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এর প্রমাণ রয়েছে। আমাদের দেশের পোল্ট্রি শিল্পের মতো এসব গাছে সর্বদা পরিচর্যা করতে হয়। এর ব্যতিক্রম হলে ফল আসে না।
তিনি আরও বলেন, এই গাছ রোপণে যেমন সফলতা আছে, তেমন ক্ষতিও আছে। রোপণের শুরু থেকে পরিচর্যাসহ খাদ্য ঘাটতি হলে গাছ থেকে কোনো সফলতা পাওয়া যাবে না। প্রতিদিন এর পরিচর্যা ও পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার দিতে হবে। সেলিম রেজা নাটোরের সফল কৃষি উদ্যোক্তাদের মধ্যে একজন। তার বাগানে এমনটি হবে ভাবা যায়নি।
তাপস কুমার/এসপি