পুষ্টিগুণের কারণে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ড্রাগন ফল। এই ফলের ভিডিও ইউটিউবে দেখে অনুপ্রাণিত হন শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার শৌখিন চাষি জসিম উদ্দিন সরদার। প্রথমে তিনি জেলার বিভিন্ন জায়গায় ড্রাগনগাছের চারার খোঁজ করেও পাননি। পরে মাদারীপুর শহরের একটি হর্টিকালচার থেকে ড্রাগন ফলের চারা আনেন।

২০১৮ সালে উপজেলার নিজ বাড়ির পাশে ৫ শতাংশ জমিতে ১২০টি ড্রাগনগাছ দিয়ে চাষ শুরু করেন। পরে এগুলোর পরিচর্যা ও আরও পরিসর বাড়াতে ১২ শতাংশ জমিতে শুরু করেন চাষ। এখন তার জমিতে ২৫০টিরও বেশি গাছ রয়েছে। এ ছাড়া পানের বরজ, ধানের জমি, লেবু-বাগান, আমবাগানসহ মৌসুমি সব ফসলও রয়েছে তার চাষের মধ্যে।

মো. জসিম সরদার (৫৪) গোসাইরহাট উপজেলার ইউদিলপুর ইউনিয়নের তরজুসুরগাঁও গ্রামের মৃত শামসুদ্দীন সরদারের ছেলে। তার দুই ছেলে এক মেয়ে রয়েছে। তিনি এলাকায় সফল কৃষক হিসেবে পরিচিত আজ। 

সরেজমিনে দেখা যায়, ১২ শতাংশ জমির ওপরে বড় একটি ড্রাগন ফলের বাগান। সেখানে সারিবদ্ধভাবে পিলার পোঁতা রয়েছে। প্রতিটি পিলারের গোড়ায় চারটি করে ড্রাগনগাছ লাগানো। পিলারের ওপরে টায়ার রয়েছে, যাতে গাছগুলো টায়ারের ওপর লতাতে পারে। প্রায় সব গাছই টসটসে ড্রাগন ফুল ও ফলে ভরা। কোথাও কোনোটিতে যেন কমতি নেই। আর পুরো বাগানের চারপাশে রয়েছে উন্নত জাতের সিডলেস লেবুগাছ।

মো. জসিম উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউটিউবে ড্রাগন ফলের ভিডিও দেখে চাষ করার আগ্রহ জাগে। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় চারা খুঁজলেও পাইনি। পরে বাড়ির পাশে এক কৃষি অফিসারকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। আমি যোগাযোগ করলে তারা আমাকে মাদারীপুরের একটি বাগান থেকে ১২০টি চারা সংগ্রহ করে দেন। এগুলো দিয়ে আমি চাষ শুরু করি।

প্রথমে আমি ৫ শতাংশ জমিতে ১২০টি চারা দিয়েই ড্রাগন চাষ শুরু করি। এতে আমার সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৪৫ টাকা। এখন ১২ শতাংশ জমিতে আমার ২৫০টিরও বেশি গাছ রয়েছে। এ সময় আরও কয়েক হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রথম বছর তেমন কোনো ফলন হয়নি। কিন্তু চলতি বছর আল্লাহর রহমতে ভালো ফলন হয়েছে। আমি ড্রাগন চাষ করে সফল।

বাজারেও ড্রাগনের চাহিদা রয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এই মৌসুমে ৭০০ কেজি ড্রাগন ফল বিক্রির আশা করছেন তিনি। এতে ৫৫০ টাকা দরে ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকার মতো বিক্রি হবে। সব খরচ বাদ দিলে ৩ লাখ টাকার মতো আয় হওয়ার আশা করছেন জসিম।

স্থানীয়রা বলেন, মাঝেমধ্যেই জসিম ড্রাগন ফলের ভিডিও দেখাতেন আর বলতেন, এটি দেখতে কত সুন্দর। খেতেও অনেক স্বাদ। কিন্তু কোথাও চারা পাওয়া যায় না এগুলোর। দোকানে বসলেই ড্রাগন ফল ও গাছ নিয়ে কথা বলতেন। একদিন শুরু করে এখন তিনি সফল। তার হাতে একধরনের জাদু রয়েছে। যেখানে হাত দেন, সেখানেই সোনা ফলে। সব ধরনের কৃষি কাজ করেন তিনি। আমরা তার সফলতায় খুশি।

তর জুসুরগাঁও এলাকার বাসিন্দা সিরাজ মিয়া বলেন, আমার বাড়ির পাশেই জসিমের বাড়ি। আমরা দেখেছি তিনি ড্রাগন চাষ নিয়ে অনেক কষ্ট করেছেন। সারা রাত কাজ করেছেন। প্রথমবার ফল পাননি। কিন্তু এখন সফল একজন চাষি। তবে এই বছর অনেক গাছ মারা গেছে তার। তিনি ড্রাগনের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের লেবুগাছ লাগিয়েছেন। এতেও ভালো ফল পেয়েছেন। প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক আসে তার এই বাগান দেখার জন্য।

মো. জসিম সরদার বলেন, ড্রাগনগাছের পরাগায়ন রাতের বেলা করতে হয়। দিনে এই গাছের ফুল ফোটে না। রাত হলে ফুল ফোটে। তখন এসে তুলি (রংতুলির তুলি দিয়ে চাষিকে করতে হয়) দিয়ে পরাগায়ন করতে হয়। অনেক সময় এটি করতে করতে ভোরও হয়ে যায়। তবে এ বছর অনাবৃষ্টির কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছে ক্ষেতের। আমি সেচ দিয়ে সতেজ রাখার চেষ্টা করছি। তারপরও কিছু গাছ মারা গেছে।

প্রথম দিকে ড্রাগন ফলের চাহিদা ছিল না। মানুষ এটি পছন্দ করত না। আমি বাজারে ফল ব্যবসায়ীদের কাছে নিয়ে বিক্রি করতে হতো। দাম বেশি পেতাম না। কিন্তু এখন প্রতিদিন ফোন আসে বা এসে বলে যাচ্ছে, ফল লাগবে। কিন্তু আমি এখন সেই চাহিদা মেটাতে পারছি না। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে সাত কেজির চাহিদা থাকে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহাবুদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গোসাইরহাটে ড্রাগন চাষ করে জসিম সরদার ভালো ফলন পেয়েছেন। প্রথমে ছোট একটি জায়গায় শুরু করলেও এখন বড় পরিসরে চাষ করছেন। আমরা তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকি। এ ছাড়া ড্রাগন চাষে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এমনিতেই এ এলাকার মাটি ড্রাগন চাষের জন্য উপযুক্ত। যদি কেউ চাষ করতে ইচ্ছুক হন, তাহলে আমরা তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করব।

এনএ