নিষেধাজ্ঞার খবরে জেলেরা বললেন, অহন ইলিশের পেডে আন্ডা নেই
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মৌসুমের শেষ দিকে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে কাঙ্ক্ষিত রুপালি ইলিশ। এতে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে ঘাটগুলোতে। হাসি ফুটেছে জেলেদের মুখে। তবে এর মধ্যে হঠাৎ করে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞার খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জেলেরা।
জানা গেছে, এ বছর মৎস্য অধিদফতরের ঘোষণা অনুযায়ী, ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর ২২ দিন ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ সময় নদী ও সাগরে সকল প্রকার মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ভোলার নাছির মাঝি ঘাটের জেলে হাসন আলী বলেন, সিজনে গাঙ্গে মাছ আছিল না। এই কয়ডা দিন আগে যা ইলিশ মাছ পরছে তা দিয়ে পরিশোধ করতে পারি নাই। এনজিও আলারা বাড়িত আইয়া হইচই করে। এহন কয়ডা মাছ পরতাছে। কামাই করমু দেনা দিমু। এহন ইলিশ মাছের পেডে কোনো আন্ডা (ডিম) নাই। অনহ দিছে অভিযান। অভিযান একটু সময় কইরা দিলে বাইয়া চাইয়া দুই পইসা কামাই কইরা দেনাও শোধ করাযায়, খাওনও যায়। আমরা কী কইরা বাচুম আর কী কইরা চলুম?
শুধু হাসন আলী নয়, ইলিশা, তুলাতিলী, ভোলার খাল মাছঘাটের জাফর মাঝি, হানিফ মাঝি ও বশির মাঝি একইভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, অভিযানের সময়টা আরও ১০-১৫ দিন পেছানো দরকার। এখন অভিযান দিছে ইলিশে ডিম ছাড়ার জন্য। কিন্তু এখন আমরা নদীতে যেই ইলিশ পাই তাতে তেমন ডিম নাই।
গত বছর যে সময়ে অভিযান ছিল তখনও মাছের পেডে ডিম ছিল না। অভিযানের পরে জালে ডিমওয়ালা ইলিশ উঠছে। এই বছর তারও ১০ দিন আগে অভিযান দিছে। এই অভিযান তো ডিম ছাড়ার অভিযান না। গরিব মারার অভিযান। এমনিতেই সিজনের শুরুতে নদীতে ইলিশ ছিলে না। আমাগো ধারদেনা কইরা এনজিওর ঋণের হপ্তা দিতে হইছে। এখন কিছু মাছ পরতাছে। কামাই করমু, দেনা দিমু। তাও আবার অভিযান।
তারা আরও বলেন, অভিযানে জেলেগো লইগা সরকার কোনো সাহায্য দেয় না। সরকার সাহায্য দেয় আমরা পাই না।পায় যাগো ১০-১৫ কানি জমি আছে।
অভিযানের বিষয়ে একইভাবে অভিযোগ করেন ইলিশা মাছঘাটের আড়তদার মো. সাহাবউদ্দিন বেপারী। তিনি বলেন, প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত ইলিশের মৌসুম হলেও গত কয়েক মাসে ভোলার নদীতে তেমন একটা ইলিশের দেখা মেলেনি। সারাদিন জাল বেয়েও তেলের টাকাও উঠাতে পারেনি তারা। কিন্তু মৌসুমের শেষের দিকে মোটামুটি মাছ পরতেছে। জেলেরা বিগত সময়ের ধারদেনা পরিশোধের চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু ধারদেনা পরিশোধ করবে কীভাবে? এখন দিছে অভিযান। কিন্তু অভিযান তো সফল হবে না। এখন মাছের পেটে ডিম আসে নাই।
ভোলা সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকতা মো. জামাল হোসাইন জানান, দেরিতে হলেও জেলেদের জালে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলছে। এতে করে জেলে, মৎস্য ব্যবসায়ী ও মাছ ঘাটে উৎসব বিরাজ করছে। এর মধ্যে সরকার ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর ২২ দিন মা ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম ঘোষণা করেছেন। এই সময় অমাবস্যা ও পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ নদীতে আসে ডিম ছাড়ার জন্য। এ সময়ে উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য দফতর কঠোর অবস্থানের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা পালন করবেন।
তিনি আরও জানান, নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে মাছ ধরা থেকে বিরত জেলেদের মাঝে ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে পরিবার প্রতি ২০ কেজি চাল বিতরণ করা হবে। নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী সময়ে জেলেরা আবার তাদের জালে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা পাবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম জানান, অক্টোবর মাসে মা ইলিশের প্রজনন মৌসুম। এ সময় জেলেদের যেসব সংগঠন আছে তাদের প্রতিনিধি নিয়ে নদীতে অভিযান পরিচালনা করব। জেলেদের জন্য যে প্রণোদনা আসবে তা দ্রুত তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করব।
জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে ভোলায় ১ লাখ ৭৫ হাজার ৩৯০ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। যা দেশের মোট ইলিশ উৎপাদনের ৩৩ ভাগ। চলতি অর্থবছরে জেলায় ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৯০ মেট্রিক টন। মৌসুমের প্রথম তিন মাসেই ধরা পড়েছে প্রায় ৫২ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ।
এসপি