চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে নেপাল যাবে যাত্রীবাহী ট্রেন
রেলপথ দিয়ে বাংলাদেশ থেকে নেপালে যাবে যাত্রীবাহী ট্রেন। ভারতের ট্রানজিট সুবিধা ব্যবহার করে পণ্য পরিবহনের পর এবার চালু হবে যাত্রীবাহী ট্রেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশন হয়ে ভারতের সিঙ্গাবাদ রেলপথ দিয়ে নেপালের সীমান্তবর্তী স্টেশন বীরগঞ্জ যাবে এই ট্রেন।
সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রেলস্টেশন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশে নিযুক্ত নেপালের রাষ্ট্রদূত এইচ ই ড. বংশধর মিশ্র এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
রহনপুর রেলস্টেশন ছাড়াও গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের শিবরামপুরের বাংলাদেশ-ভারত রেললাইন সীমান্তে বাংলাদেশ থেকে নেপালের প্রবেশপথ এলাকাও পরিদর্শন করেন তিনি।
এসময় রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন থেকে নৌপথে ইউরিয়া ও ডিএপি সার আমদানি করে নেপাল। বর্তমানে এসব সার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রেলপথ ব্যবহার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রেলস্টেশন দিয়ে ভারতের মধ্য দিয়ে নেপালে পরিবহন করা হচ্ছে। এতে দূরত্ব কমার পাশাপাশি খরচ অনেক কমে আসছে। নেপাল সরকার মনে করে, এভাবে পণ্য পরিবহন করা গেলে যাত্রীও পরিবহন করা সম্ভব। ফলে ত্রিদেশীয় রেল ব্যবস্থায় বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের সম্পর্ক দৃঢ় হয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে নেপালে যাত্রীবাহী ট্রেন চালুর উদ্দেশ্যেই এ সফর উল্লেখ করে নেপালের রাষ্ট্রদূত এইচ ই ড. বংশধর মিশ্র আরও বলেন, রহনপুর-সিঙ্গাবাদ রেলপথে সার পরিবহনের পাশাপাশি পোশাক, কৃষিজাত বিভিন্ন পণ্য আমদানি-রফতানি বাড়াতে কাজ করছে দুদেশ।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নকশীকাঁথা, আম, কাঁসা, রেশমের বিভিন্ন পণ্য আমদানি করতে আগ্রহী নেপাল। এছাড়াও নেপালের পর্যটন ও অবকাঠামোখাতে বিনিয়োগে বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করতে কাজ করছে সেদেশের সরকার।
৪ বারের সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য নেপালের রাষ্ট্রদূত এইচ ই ড. বংশধর মিশ্র জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী রহনপুর রেলস্টেশন থেকে ভারতের সীমান্তবর্তী স্টেশন সিঙ্গাবাদের দূরত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার। এরপরই ভারতের সিঙ্গাবাদ হয়ে ২১৭ কিলোমিটার পরেই নেপালের বীরগঞ্জ স্টেশন। ভারত তাদের রেলপথ ব্যবহারে সম্মতি দেওয়ায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আলোর মুখ দেখেছে বাংলাদেশ-নেপাল বৈদেশিক বাণিজ্য। আগে থেকেই ভারতের সঙ্গে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম চালু থাকায় দেখা দিয়েছে ত্রিদেশীয় বাণিজ্যের অপার সম্ভাবনা।
সার্কভুক্ত দেশসমূহের ভিসামুক্ত ভ্রমণের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত এইচ ই ড. বংশধর মিশ্র বলেন, সার্কভুক্ত ৭টি দেশের মধ্যে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণের বিষয়টি ভারত-পাকিস্তান বিরোধের কারণেই আটকে আছে। তবে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের ত্রিদেশীয় সম্পর্ক বর্তমানে অন্যন্য উচ্চতায় রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশি নাগরিকগণ ভারতের ভিসাতেই নেপালের বিরাটনগরে চোখের চিকিৎসা করাতে পারে। বাংলাদেশ থেকে পর্যটন ও চিকিৎসা নিতে আরও সুবিধা করতে ভিসার জটিলতা কমাতেও কাজ করছে নেপাল সরকার।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, রাষ্ট্রদূতের সচিব রিয়া ছেত্রী, দ্বিতীয় সচিব রঞ্জন যাদব, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, পশ্চিমাঞ্চলের বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুর রহিম, নিরাপত্তা বিভাগের সহকারী কমান্ডিং অফিসার আবু হেনা, গোমস্তাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার নজির, গোমস্তাপুর থানা পুলিশের অফিসার-ইনচার্জ (ওসি) দিলীপ কুমার দাস, রহনপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার কামরুল মির্জাসহ বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এর আগে নেপালের রাষ্ট্রদূত সকালে বাংলাদেশের সোনামসজিদ স্থলবন্দর ও ভারতের পশ্চিমবরঙ্গের মহদীপুর স্থলবন্দর পরিদর্শন করেন। দুই দেশের স্থলবন্দর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন নেপালের রাষ্ট্রদূত এইচ ই ড. বংশধর মিশ্র।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. শামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব-আল-রাব্বী, সোনামসজিদ স্থলবন্দর কাস্টমস-এর সহকারী কমিশনার মমিনুল ইসলাম, সোনামসজিদ স্থলবন্দর পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের ম্যানেজার মাইনুল ইসলামসহ আরো অনেকে।
মো. জাহাঙ্গীর আলম/এমএএস