নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সমুদ্র উপকূলবর্তী ঘাটগুলোতে তাজা ইলিশ কিনতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ক্রেতারা ভিড় করছেন। ক্ষতিকর উপাদান ও বরফ ছাড়া জেলেদের কাছ থেকে ইলিশ কিনতে পেরে খুশি ক্রেতারা। অন্যদিকে মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়া সরাসরি ইলিশ বিক্রি করতে পারায় লাভবান হচ্ছেন জেলেরাও। তবে সরাসরি ক্রেতার কাছে জেলেদের এই মাছ বিক্রিতে বিপাকে পড়েছেন ইলিশের মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। 

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপকূলের প্রায় ৫শটি ট্রলার মাছ ধরার জন্য সাগরে নেমেছে। এসব ট্রলারে প্রায় ১০ হাজারের মতো জেলে রয়েছে।

শনিবার (২৫ আগস্ট) বিকেলে হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাট ঘুরে খো যায়, ইলিশ কিনতে সেখানে নোয়াখালীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লোকজন ভিড় জমিয়েছেন। জোয়ার-ভাটা হিসাব করে সকালে ও বিকেলে দিনে দুইবার ইলিশ বেচাকেনা হচ্ছে ঘাটে।

সোনাইমুড়ী উপজেলা থেকে ইলিশ কিনতে ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে এসেছেন আমিনা বেগম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, শুনলাম আগামী ৪ অক্টোবর থেকে ইলিশ মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকবে। তাই  বেশি করে ইলিশ কিনতে এসেছি। দাম যেমনই হোক এই ঘাটে ফ্রেশ ও তাজা ইলিশ মাছ পাওয়া যায়। 

ইলিশ নিয়ে ট্রলার আসতেই হাঁকডাকে সরগরম হয়ে ওঠে পুরো ঘাট এলাকা। ট্রলারে থাকতেই ঝুড়িতে সাজিয়ে রাখা ইলিশ বিক্রির তোড়জোড় শুরু হয়। দর-কষাকষি চলে ক্রেতা-বিক্রেতার মাঝে। এখানে মাছ ওজন মেপে বিক্রি হয় না। ঝুড়িসহ মাছের ওজন অনুমান করে দাম নেন জেলেরা। উন্মুক্ত দর-কষাকষি চলে। যার দর বেশি ওঠে, তিনি পান মাছ। মাছের আকার ও ওজন অনুপাতে ঘাটে প্রতি ঝুড়ি মাছ এক হাজার থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে দেখা গেছে। 

নোয়াখালী সদর উপজেলা থেকে মাছ কিনতে আসা শাহজাহান মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাত্র ঘটে মাছ এসেছে। এখনো কিনিনি, দাম-দর করছি। ঘাটে সরাসরি ইলিশ কেনা যায় বলে বাজারের তুলনায় দাম কিছুটা কম পড়ে। তা ছাড়া ফরমালিন ও বরফ ছাড়া তাজা ইলিশের নিশ্চয়তা তো আছেই। 

চেয়ারম্যান ঘাটের মেম্বার মৎস্য আড়তের মালিক মো. ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের নিজস্ব ট্রলারের মাছ ঘাটেই বিক্রি করি।  আগে ঘাটে সাধারণ মানুষ কম আসত। এখন বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক মানুষ মাছ কিনতে ঘাটে আসে। এতে কিছুটা বেশি দামে মাছ বিক্রি করতে পারি। 

হাতিয়া উপজেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আক্তার হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইলিশ কিনতে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে সাধারণ মানুষ আসছে। এখন মেঘনা নদীতে প্রচুর ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। নিষেধাজ্ঞা ৪ অক্টোবর থেকে পিছিয়ে ১৫ অক্টোবর করা হলে অনেক মাছ ধরা পড়তো। 

হাতিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অনিল চন্দ্র দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত আগস্ট মাসে হাতিয়া উপকূল থেকে ৫ হাজার টনের মতো ইলিশ সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রথম দিকে একটু কম হলেও এখন প্রতিদিন প্রায় দুইশ টন করে ইলিশ আহরণ করা হচ্ছে। 

নোয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ডা. মোতালেব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে বর্তমানে বাজারে ইলিশের চাহিদা বেশি। তাছাড়া ৪ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এতে করে শেষ সময়ে মাছের চাহিদা বেড়ে গেছে।

হাসিব আল আমিন/আরএআর