একটি দিয়ে মাছ চাষ শুরু, এখন ১০ পুকুরের মালিক
পড়াশোনা শেষ করে নিজ জমিতেই পুকুর করে শুরু করেছেন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ। প্রথমে একটি পুকুর দিয়ে শুরু করলেও আস্তে আস্তে মাছ চাষের আওতায় আসে ১০টি পুকুর। তারপর আসে সফলতা। আর তার এই সফলতা দেখে মাছ চাষের দিকে এগিয়ে আসছেন স্থানীয় বেকার যুবকরা।
সফল এই মাছচাষির নাম ইফতেখারুল ইসলাম। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সদর উপজেলার ৯ নং রায়পুর ইউনিয়নের মটরা গ্রামে তার বাড়ি। সরেজমিনে সেখানে গেলে চোখে পড়ে তার সফলতার চিত্র।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, ঢাকা তেজগাঁও কলেজে বিবিএ করে ২০১৯ সালে বাসার সামনে প্রথম মাছ চাষ শুরু করেন এই উদ্যোক্তা। প্রথম অবস্থায় প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে একটি পুকুরে রুই, তেলাপিয়া, মাগুর, পাঙাসসহ বিভিন্ন মাছের চাষ করেন তিনি। কিছুদিনের মধ্যে মাছ বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেন ইফতেখারুল।
এরপর পর্যায়ক্রমে বাড়তে বাড়তে প্রায় ১০টি পুকুরে করেন মাছের চাষাবাদ। পুকুর করতে ও মাছের পেছনে যা খরচ হয়েছে, বর্তমানে বাজারে মাছ বিক্রি করে তার দ্বিগুণ লাভ করছেন এই সফল উদ্যোক্তা। তার উৎপাদিত মাছ শুধু নিজ জেলায় নয়, পাশের জেলাগুলোতেও বিক্রি করেন তিনি। এযাবৎ ১০টি পুকুরের মাছ বিক্রি করে প্রায় ২০ লাখ টাকার মতো আয় করেন বলে জানান এই উদ্যোক্তা।
ইফতেখারুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি প্রায় তিন বছর ধরে মাছ চাষের সঙ্গে জড়িত। পড়াশোনা শেষ করে আমি মাছের ব্যবসা ধরেছি। প্রথমে একটি পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেছিলাম। এরপর আস্তে আস্তে ১০টি পুকুরে মাছের চাষ শুরু করি।
মাছের সুষম খাদ্য বিষয়ে তিনি বলেন, আমার পুকুরে মাছের জন্য প্রতিদিন এক বেলা করে ফিড ও দুই বেলার করে হাতের তৈরি খাবার ব্যবহার করি। এ ছাড়া অ্যাকোয়ামিন পরিমাণমতো রেপিড ব্রো মাছের প্রয়োজন ভেবে দিয়ে থাকি। এ ছাড়া মনে রাখতে হবে পুকুরে পানি যাতে পরিষ্কার থাকে। গ্যাসের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পানিতে সঠিক পরিমাণ লবণ ও চুন ব্যবহার করতে হবে। পিএইপির পরিমাণ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।
এ ছাড়া মৎস্য অধিদপ্তর থেকে আমাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখন তারা প্রতিনিয়ত আমাদের খোঁজখবর রাখছে। আমি মনে করি এই মাছ চাষের মাধ্যমে সমাজের বেকার সমস্যা দূর করা যাবে বলে যুবসমাজকে আশ্বস্ত করেন তিনি।
চলতি বছরের জুন মাসে জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্যচাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ প্রকল্পের সহযোগিতায় ৫০ শতক জমিতে করেছেন কই মাছের চাষ। জেলার মৎস্য অধিদপ্তর থেকে দেওয়া হয়েছে চার দিনের প্রশিক্ষণ।
সফল উদ্যোক্তা ইফতেখারুলের মাছ চাষের সফলতার গল্প বর্তমানে এলাকার মানুষের মুখে মুখে। এলাকার অনেকেই তাকে অনুসরণ করে এবং তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে শুরু করেছেন মৎস্য চাষ।
স্থানীয় মাছচাষি সফিকুল ইসলাম, এজহারুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের এলাকার ইফতেখারুল মাছ চাষ করে আসছে। এই খাতে অনেক লাভবান হয়েছেন তিনি। আমরা তার মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। তার মাধ্যমেই বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এখন আমরাও আমাদের পুকুরে মাছ চাষ করছি। মাছ বিক্রি করে আমরাও লাভ করেছি।
সদর উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জেলায় প্রায় ৯৪ জন মাছচাষিকে মাছ চাষ বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছি আমরা। তাদের সফলতা দেখে অন্যরা এগিয়ে আসছে। আমরা অনলাইন থেকে শুরু করে মাঠপর্যায়ে গিয়ে চাষিদের খবরাখবর রাখছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ইউনিয়ন পর্যায়ে মৎস্যচাষ প্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে জেলায় মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। সেই সঙ্গ জেলায় বেকারত্বের হার অনেকাংশে কমে আসবে বলে আমরা মনে করি।
এনএ