যে বাজারে প্রতিদিন বিক্রি হয় ৩ হাজার মণ মাছ
মৌসুমের শুরুতেই জমে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ সাদা মাছের পাইকারি বাজার। বাজারটি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ২ নং হারতা ইউনিয়নের হারতায় অবস্থিত। এ বাজারে প্রতিদিন দুইশ থেকে তিন হাজার মণ পর্যন্ত মাছ বিক্রি হয়। অক্টোবরের শেষে প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচ হাজার মণ মাছ বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
হারতা বাজারের কারণে যেমন দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে তেমনি সৃষ্টি হয়েছে অনেক কর্মসংস্থান। পাশাপাশি সারাদেশের মাছের চাহিদা পূরণে ব্যাপক অবদান রাখছে এ বাজার। মূলত খামারে চাষ হওয়া মাছ এখানে বিক্রি হয় বলে স্থানীয়ভাবে বাজারটিকে বলা হয় সাদা মাছের বাজার।
বিজ্ঞাপন
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন দুপুর আড়াইটা থেকে ৪টার মধ্যে বাজার জমে উঠার কথা থাকলেও মৌসুমের শুরুতে বাজার জমছে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। বাজারের সময়সীমা এক থেকে দেড় ঘণ্টা হলেও কার্প জাতীয় মাছ, চিংড়ি, পাঙাস, তেলাপিয়া, পুঁটি, কৈসহ মিঠা পানির মাছ পাওয়া যায়। এ কারণে এ বাজারের সুনাম দেশজোড়া।
মাছ চাষিরা ট্রলার, নৌকা বা ভ্যানে করে মাছ এনে আড়তে তোলার পরপরই নিলামে বিক্রি হয়ে যায় মাছগুলো। বাজারেই রয়েছে বরফকল এবং বরফ ভাঙার মেশিন। মাছ বিক্রি হয়ে গেলে গাড়িতে তুলে বরফ দিয়ে তাৎক্ষণিক বাজার থেকে চলে যায় গাড়িগুলো।
বাজারটি পরিচালিত হয় হারতা আলোকোজ্জ্বল বহুমুখী সমবায় সমিতির মাধ্যমে। বাজার কমিটির সদস্য ও মাছের আড়তদার সুভাষ চন্দ্র হালদার বলেন, উজিরপুরে মাছের কয়েকশ ঘের আছে। তারা সারা বছর মাছ চাষ করে এই বাজারে বিক্রি করেন। মাছ চাষিরা নৌকা, ট্রলার বা ভ্যানে করে জীবন্ত মাছ নিয়ে আসেন।
তিনি আরও বলেন, শুধু দক্ষিণাঞ্চল নয়, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার থেকে পাইকারি ক্রেতারা আসেন এই বাজারে। বাজারে ব্যবসা করে আমরা খুব ভালো আছি। এই বাজারের জন্য আমাদের সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে।
মাছের ব্যবসায়ী নিখিল দাস বলেন, হারতা সাদা মাছের বাজারটি আগে রাত ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত চলত। কিন্তু চার বছর আগে বোমা ফাটিয়ে গণডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল। এরপর ব্যবসায়ীরা সবাই সিদ্ধান্ত নিয়ে দিনে নিয়ে আসেন। এখন প্রতিদিন দিনেই বসে। পৌষ মাস পর্যন্ত জমজমাট থাকবে বাজারটি।
উপজেলার গঙ্গামতির মাছ চাষি কামরুল ইসলাম জানান, এই বাজারে মাছ পরিবহনের জন্য আলাদা ট্রলার তৈরি করা আছে। ট্রলারে পানি দিয়ে জীবন্ত অবস্থায় মাছগুলো নিয়ে আসা হয়। তিনি ২০ মণ পাঙাস নিয়ে আসেন তিনি।
মশাং থেকে আসা মাছ চাষি পলাশ বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড় পাইকারি মাছের বাজার হারতা। এখানে শুধু সাদা মাছই বিক্রি হয়। আজ আমি ১৫ মণ মাছ নিয়ে এসেছি। সাইজ অনুসারে ৬ থেকে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি মাছ।
বাজার দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা বিধান মন্ডল বলেন, মৌসুম এখনও শুরু না হওয়ায় বেশি মাছ উঠছে না। আর কয়েক দিন পরই প্রচুর মাছ আসবে বাজারে।
মাছের পাইকারি ক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি আজ চার হাজার কেজি মাছ কিনেছি। এই মাছ কক্সবাজারের রামু এবং নারায়ণগঞ্জ যাবে। এ ছাড়াও কুমিল্লা, ঢাকা, সিলেট, রাজশাহী, যশোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাছ পাঠাই। হারতা মাছের বাজারের সঙ্গে কমপক্ষে পাঁচ হাজার মানুষ জড়িত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
হারতা আলোকোজ্জ্বল বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সায়েম বিশ্বাস বলেন, সারাদেশে এখান থেকে মাছ যায়। বাজারে ২০টি আড়ত রয়েছে। যারা মাছের ব্যবসা করেন তারা সবাই হারতা, সাতলার স্থানীয় বাসিন্দা। এ ছাড়া মাছ চাষিরাও উজিরপুরসহ আশপাশের উপজেলার বাসিন্দা।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/এসপি