স্বাদে ও মানে অনন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সবুজ রঙের মাল্টা। বাইরের অংশ গাঢ়ো সবুজ আর ভেতরটা মিষ্টি রসে ভরা। ছয় বছর ধরে জেলার তিন উপজেলায় চাষ হচ্ছে মাল্টা। স্বল্প খরচে লাভ বেশি হওয়ায় প্রতি বছরই নতুন নতুন কৃষক মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন। এবার জেলায় ১৩৫ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ হয়েছে। এসব জমি থেকে অন্তত ২ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন মাল্টা পাওয়ার আশা করছে কৃষি বিভাগ। যার বাজার মূল্য ২৭ কোটি টাকারও বেশি।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলার কসবা, আখাউড়া ও বিজয়নগরের মাটি মাল্টা চাষের জন্য উত্তম। ফলন ও মুনাফা ভালো হওয়ায় প্রতি বছরই মাল্টার আবাদ বাড়ছে। তিন উপজেলার ১৩৫ হেক্টর জমিতে বারি-১ ও বারি-২ জাতের মাল্টার চাষ হয়েছে। গাছে গাছে ঝুলছে রসালো মাল্টা। আর কদিন পরই পরিপক্ক হবে মাল্টাগুলো।

কেমিকেলমুক্ত সবুজ রঙের মাল্টা স্বাদে ও মানে ভালো হওয়ায় বাজারে এর চাহিদাও বেশি। প্রতি কেজি মাল্টা পাইকারদের কাছে ১০০-১২০ টাকা দরে বিক্রি করেন কৃষকরা। অধিকাংশ পাইকার সরাসরি কৃষকের বাগান থেকে মাল্টা কেনেন। পাইকারদের মাধ্যমেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাল্টা বাজারজাত হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে।

বিজয়নগর উপজেলার সিংগারবিল ইউনিয়নের শ্রীপুরমোড়া গ্রামের মাল্টা চাষি সোহাগ ভূইয়া বলেন, এবার দুই কানি জমিতে মাল্টা চাষ করেছি। ফলনও খুব ভালো হয়েছে। তবে আমি পাইকারদের কাছে পুরো বাগানটি সাড়ে ৩ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। তারা সাড়ে ৪-৫ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারবে।

আব্দুল আলীম নামে আরেক চাষি জানান, তিনি বাড়ির পাশে ৪০ শতাংশ জমিতে মাল্টা চাষ করেছেন। গত বছরের তুলনায় এবার ফলন কিছুটা বেশি হয়েছে। এবার অন্তত এক টন মাল্টা পাবেন বলে আশা করছেন তিনি। যার বাজার মূল্য প্রায় দেড় লাখ টাকা। পুরো বাগান পরিচর্যায় তার খরচ হয়েছে মাত্র ২৫ হাজার টাকা।

হাকিম মিয়া নামে এক পাইকার জানান, করোনায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মানুষ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল খাচ্ছে বেশি। সেজন্য বাজারে মাল্টার চাহিদা বেড়েছে। তিনি দুই লাখ টাকা দিয়ে বিজয়নগরের বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের একটি মাল্টা বাগান কিনেছেন। সব খরচ মিলে মাল্টাগুলো বিক্রি করে অন্তত এক লাখ টাকা লাভ হবে।

বিজয়নগর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাদিউল ইসলাম সৃজন জানান, কৃষকদের মাল্টা চাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিনা মূল্যে চারা ও সার দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে- কিভাবে কম খরচে ফলন ভালো করা যায়। আর কদিন পরই বাগানের মাল্টা পরিপক্ক হবে। এরপর শুরু হবে বাজারজাত।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক রবিউল হক মজুমদার বলেন, এ বছর ২ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ফলনের আশা করা হচ্ছে। এর বাজার দর অন্তত ২৭ কোটি টাকা। কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের আবাদ কৌশল ও পোকা-মাকড় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া হয়। স্বাদে ও মানে ভালো হওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাল্টার চাহিদা দেশের সবখানে রয়েছে। আশা করছি অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মাল্টা বাজারজাত শুরু হবে।

এসপি