টাঙ্গাইলের সখীপুরে ২১০ শতাংশ জায়গা লিজ নিয়ে লেবুর বাগান করে বিপাকে পড়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কৃষক মোফাজ্জল হোসেন। জমির মালিক জায়গা দখলে নিয়ে দেয়াল দেওয়ায় লেবু ও চারা বিক্রি করতে পারছেন। এতে লেবু পেকে বাগানেই নষ্ট হচ্ছে। ফলে লাখ লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনি।

জানা গেছে, সখীপুর উপজেলার কচুয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত আব্দুল বাছেদের ছেলে মোফাজ্জল হোসেন একই গ্রামের দেওয়ান বাড়ির পাঁচজনের কাছ থেকে পাঁচ বছর আগে কচুয়া মৌজার ৩৭৩৬ দাগের ২১০ শতাংশ জমি তিন লাখ টাকায় বর্গা নিয়ে লেবুর বাগান করেন। তার বাগান করতে খরচ হয় ১৫ লাখ টাকা। লেবুর গাছগুলো ফল দেওয়া শুরু করেছে। বর্তমানে তিনি বাগান থেকে লেবু ও কলম চারা বিক্রি শুরু করেছেন। 

এর মধ্যে তার চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় পুনরায় চুক্তির জন্য দেওয়ান বাড়ির পাঁচ ভাইকে জানান। দুই ভাই সুজাত আলী ও মোজাম্মেল হক ৯০ শতাংশ জমি বর্গা দিলেও আ. জব্বার, হযরত আলী ও শওকত জমি বর্গা দেননি। তারা না জানিয়েই স্থানীয় দুই ব্যক্তির কাছে প্রতি শতাংশ ৬০ হাজার টাকা দরে বিক্রি করে দেন। পরে তারা লেবুর বাগানে প্রবেশের পথ বন্ধ করে দেয়। এতে তার বাগানে লেবু পেকে ঝরে যাচ্ছে। 

এমনকি বাগানের মালিক মোফাজ্জল হোসেনের লাগানো সাইনবোর্ড ভেঙে সেখানে দেওয়ান লেমন গার্ডেনের সাইন ঝুলিয়ে দিয়েছেন। ফলে বাগানের লেবু ও চারা বিক্রি করতে পারছেন না মোফাজ্জল। এতে তার লাখ লাখ টাকার লেবু ও চারা নষ্ট হচ্ছে।

কচুয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিকুর বলেন, মোফাজ্জল দেওয়ান বাড়ির কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে লেবুর বাগান করেছিল। পাঁচ বছর যাওয়ার পর লিজের নবায়ন না করে উল্টো বাগানের লেবুর গাছ কেটে ফেলতে বলছে। এতে তার লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হবে। এছাড়া সে বাগানেও প্রবেশ করতে পারছে না।

রফিকুল ইসলাম নামের আরেকজন বলেন, বনের জমি মোফাজ্জলকে লিজ দিয়েছে কচুয়ার দেওয়ান বাড়ির সন্তানরা। না জেনে সেই জমিতে মোফাজ্জল লেবুর বাগান করেছে। এতে পরবর্তিতে তাকে পুনরায় লিজ না দিয়ে বনের জায়গা দখলকারীরা অন্য ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এতে কৃষক মোফাজ্জল লাখ লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

লেবু বাগানের মালিক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, তিন লাখ টাকা দিয়ে ১০ বছরের জন্য ২১০ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে লেবুর বাগান করি। এর মধ্যে লিজ চুক্তিতে পাঁচ বছর উল্লেখ করা হয়। কিন্তু দলিলে বলা হয়, পুনরায় লিজ তাকেই দেওয়া হবে। কিন্তু ৯০ শতাংশ পেলেও বাকি জমি আমাকে লিজ না দিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছে। লেবুর বাগানে আমার ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক লাখ টাকার কলম চারা করেছি। যখন লাভের মুখ দেখব সেই সময় আমার লিজ বাতিল করে দিয়ে জমিতে দেয়াল দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমার বাগানের সাইনবোর্ড ভেঙে তাদের নামের সাইনবোর্ড লাগিয়েছে। জমিতে গেলে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে। লেবু পাড়তে না পারায় বাগানেই পড়ে নষ্ট হচ্ছে। এ ঘটনার পরই জানতে পারি, জমিটি আসলে দেওয়ান বাড়ির না। এটা বন বিভাগের জায়গা। এ নিয়ে আদালতে দুটি মামলা দায়ের করেছি। তবে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে কোনো বিচার পেলাম না।

জমির মালিকের চাচাতো ভাই সাখাওয়াত জানান, লেবুর বাগানের জমি তার চাচাতো ভাইদের। বাপ-দাদার জমি বনের নামে রেকর্ড থাকলেও দখলে রয়েছি আমরা। লেবুর বাগানের মালিক মোফাজ্জলকে পাঁচ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ১১০ শতাংশ জমি বিক্রি করা হয়েছে।

জমির মালিক দেওয়ান সুজাত আলী বলেন, জমিটি আমাদের বাপ-দাদার নামে ছিল। ১৯৬২ সালের রেকর্ডে আমাদের নাম রয়েছে। পরবর্তীতে জমি বন বিভাগের নামে রেকর্ড হয়েছে। জমি দখলেও আমরা রয়েছি। আমাদের জমি তাই বিক্রি করা হয়েছে।

উপজেলার কালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম কামরুল হাসান বলেন, শোনা যাচ্ছে দেওয়ান বাড়ির লোকদের লিজ দেওয়া জমিটি বন বিভাগসহ খাস জায়গা। জমিটি ২১০ শতাংশ এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের কাছে লিজ দিয়েছিল দেওয়ান বাড়ি। এ নিয়ে দরবার সালিসও হয়েছে। কিন্তু কোনো পক্ষই মেনে নেয়নি। এর মধ্যে ওই জমির ১২০ শতাংশ বিক্রি করে দিয়েছে।

সখীপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একে সাইদুল হক ভূইয়া বলেন, জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পুলিশের কিছু করার নেই। এটা দেওয়ানি বিষয়। আমরা কিছু করতে পারি না। 

এসপি