জাফলং থেকে তিন মাসে ১৫ কোটি টাকার বালু লুট
সিলেটে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান জাফলং। নয়নাভিরাম জাফলংয়ে লাখ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটে। তবে সেই জাফলং থেকে গত তিন মাসে প্রায় ১৫ কোটি টাকার বালু লুটের অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে এলাকাবাসীর পক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বালু লুটপাটের অভিযোগ করেন জাফলং নয়াবস্তি গ্রামের বাসিন্দা মো. খোকন মিয়া। এ সময় তিনি চিহ্নিত বালু খেকো চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ ও জাফলংকে রক্ষার দাবি জানান।
লিখিত বক্তব্যে খোকন মিয়া বলেন, ৮ থেকে ৯ বছর আগে জাফলং পর্যটন স্পট, পাথর ও বালু মহালসহ প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকাকে পরিবেশ সংকটাপন্ন বা ইসিএ জোন হিসেবে চিহ্নিত করে ওই এলাকা থেকে বালু ও পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন হাইকোর্ট। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বালু খেকো চক্রের সদস্যরা প্রতিদিন অবাধে বালু লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
খোকনের দাবি, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকে প্রতিদিন ১৫-২০ লাখ টাকা করে গত ৩ মাসে প্রায় ১৫ কোটি টাকার বালু লুটপাট করা হয়েছে। তাছাড়া প্রতিদিন হাজার হাজার বালুবাহী কার্গো নৌকা চলাচলের কারণে জাফলং ব্রিজ, গোয়াইনঘাট ব্রিজ, সালুটিকর ব্রিজসহ শত শত কোটি টাকায় নির্মিত সেতু হুমকির মুখে পড়েছে। বালু খেকো চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডৌবাড়ি এলাকার লামা দোমকা গ্রামের বাসিন্দা সুভাস দাস, লেঙ্গুরা গ্রামের মুজিবুর রহমান, মামার দোকান মেলার মাঠের বাসিন্দা ইমরান হোসেন সুমন ও বিশ্বনাথের ফয়জুল ইসলাম ও আসামপাড়া গ্রামের শামসুল আলম।
খোকন মিয়া বলেন, গোয়াইনঘাট উপজেলায় কেবলমাত্র সালুটিকর ব্রিজের উজানে গোয়াইন ১১৭ নামের একটি বৈধ বালু মহাল এবার ইজারা দেওয়া হয়েছে। সালুটিকর ব্রিজের উজানে নন্দিরগাও এলাকায় ওই বালু মহালের অবস্থান। কিন্তু বালু খেকো চক্রটি ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকেও বালু লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা অভিযান চালালেও বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। বালু খেকো চক্রটি ইজারা বহির্ভূত সংরক্ষিত এলাকা থেকে বালু লুটপাট করে পার্শ্ববর্তী জৈন্তাপুরের সারি-১ ও সারি-২ বালু মহালের কাগজ দিয়ে নৌকায় বালু পাচার করছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, চক্রটির বেপরোয়া লুটপাটের কারণে এবং বোমা ও ড্রেজার মেশিনের শব্দে গোটা এলাকায় শব্দ দূষণ হচ্ছে। জাফলংয়ের পিয়াইন নদী এলাকায় অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে জাফলং চা বাগান হুমকির পড়ে পড়েছে। কান্দুবস্তু ও নয়াবস্তি এলাকাও পড়েছে হুমকির মুখে। ওই দুই গ্রামের বাসিন্দারা ঢল থেকে রক্ষার জন্য যে বাঁধ দিয়েছিলেন সেটিও বালু খেকোরা লুটপাট করে খেয়ে নিয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমদের একান্ত প্রচেষ্ঠায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গোয়াইনঘাটবাসীর স্বপ্নের জাফলং ব্রিজও হুমকির মুখে রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে চিহ্নিত বালু খেকো চক্রের কবল থেকে জাফলং নয়াবস্তি, কান্দুবস্তি, জাফলং চা বাগান, জাফলং ব্রিজ রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য, বিভাগীয় প্রশাসন, ডিআইজি, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
এ সময় লাখেরপাড় গ্রামের বাসিন্দা মো. তাজুল ইসলাম, নুরুল আমীন, নয়াবস্তি গ্রামের বাসিন্দা সুমন আহমদ ও জাফলং বস্তির বাসিন্দা ফয়জুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
তুহিন আহমদ/আরএআর