বয়স মাত্র সতের বছর। কিন্তু উচ্চতা প্রায় ৭ ফিট। জানা গেছে সে খুলনা বিভাগের সব থেকে লম্বা মানুষ। সেই লম্বা মানুষটির শরীরে বাসা বেঁধেছে নানা রকম রোগ। তাই তার পরিবারের লোকজন এখন ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। অভাবি বাবা-মা সারাক্ষণ ভাবছেন কীভাবে ছেলের চিকিৎসা করাবেন।

বয়স অনুপাতে অস্বাভাবিক দীর্ঘকায় এই কিশোরের নাম রাজু আহমেদ। সে মাগুরার শালিখা উপজেলার ছান্দড়া গ্রামের আজিজুলের আহম্মেদের  ছেলে। আজিজুল আহম্মেদ ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে যা রোজগার করেন তাই দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালান।

অসুস্থতার খবর জেনে শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা পোস্ট হাজির হয় তার বাড়িতে। সেখানে বসে কথা হয় রাজু আহমেদের সঙ্গে। আলাপচারিতায সে জানায়, পিঠের ডান পাশে বড় একটা ফোঁড়া হয়েছে। ডাক্তার অনেক পুঁজ বের করেছে। তিনি বলেছেন, খুব দ্রুত অপারেশন করাতে। তা না হলে শরীরের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে। তখন খারাপের দিকে চলে যাবে। তাছাড়া রক্তে সমস্যা দেখা দিয়েছে। হঠাৎ করেই শরীরে এলার্জি বেড়ে গেছে। আমার আব্বা-আম্মা গতকাল শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) যশোরে ইউনুস হোসেন নামে এক ডাক্তারের কাছে দেখাতে নিয়ে গিয়েছিল। উচ্চতা কতো?-তা জানতে চাইলে রাজু বলেন, সাত ফুটের দুই ইঞ্জি কম আছি। বাড়ির বাইরে গেলে সবাই তার দিকে তাকিয়ে থাকে বলে রাজু জানান।  

রাজুর মা পারভিনা বেগম জানালেন, ছোটবেলায় আমার ছেলে বাকশক্তি হারায়ে ফলিচিলো (ফেলেছিল)। এরপর অনেক চিকিৎসা পর আমার মনি সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আইচিলো (এসেছিল)। কিন্তু হঠাৎ করেই আবার তার শরীরে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। ডাক্তার বলিচে তাড়াতাড়ি অপরশন (অপারেশন) করাতে। কিন্তু আমার স্বামীর তো তেমন কোনো আয় নোজগার (রাজগার) নেই। এখন কেমন অরে (করে) ছওয়ালের (ছেলের) চিকিৎসে (চিকিৎসা) করাব তাই সবসময় ভাবতেচি (ভাবিতেছি)। তিনি আরোও বলেন, রাজু ছোটবেলায় অসুস্থ ছিল। তাই নেহা-পড়াডাও (লিখাপড়া) শিখতি (শিখতে) পারিনেই।

রাজুর বোন ৫ম শ্রেণির ছাত্রী মারিয়া খাতুন জানায়, অনেক লম্বা হবার কারণে এক সময় আমার ভাইকে দেখার জন্য অনেক লোক আসত। তখন আমার খুব আনন্দ হতো। কিন্তু এখন ভাই অসুস্থ হওয়াতে তেমন কেউ আসে না। আমাদের মনডাও খুব খারাপ থাকে।

রাজুর চাচা রফিকুল ইসলাম বলেন, রাজুর যে অবস্থা তাতে আমাদের পক্ষে ভালোভাবে চিকিৎসা করানো খুবই কষ্টকর। 

রাজুর প্রতিবেশী সাদেক মীর বললেন, বয়স অনুপাতে অস্বাভাবিক রকমের লম্বা হওয়ায় দূর-দুরান্ত থেকে অনেক লোক রাজুকে দেখতে আসে। রাজুর জন্যই এই ছান্দড়া গ্রাম বাইরে পরিচিতি পেয়েছে। তবে রাজু এখন মারাত্মক অসুস্থ। আমরা চাই সে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুক।

রাজুর বাবা আজিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি গরিব মানুষ। মাঠে কোনো ফসলি জমি নেই। ভাড়াই মোটরসাইকেল চালাই। সংসারে দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। যদি কেউ আমারে (আমাকে) একটু সাহায্য করত, তাহলে রাজুর অপারেশনডা করাতি পারতাম।

রাজুর চিকিৎসক যশোর মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. ইউনুস হোসেন মুঠো ফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, অস্বাভাবিক রকমের লম্বা রাজু আহম্মদকে আমি গত শুক্রবার দেখেছি। ঘাড়ের পেছনে তার একটা বড় ফোঁড়া হয়েছে। সিরিঞ্জ দিয়ে আমি বেশ খানিকটা পুঁজ বের করেছি। খুব দ্রুত অপারেশন না করালে শরীরের অন্য জায়গায় তা ছড়িয়ে যেতে পারে। 

তিনি আরোও বলেন, রাজুর শরীরে অনেক ধরনের সমস্যা আছে। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন।

বয়স অনুপাতে অস্বাভাবিক রকমের লম্বা হওয়ার বিষয়ে ডা. ইউনুস হোসেন বলেন, মানুষের শরীরে গ্রোথ হরমোন নামে এক প্রকার হরমোন আছে। শরীরে এই হরমোন বেশি হলে মানুষ লম্বা হয়। আবার এই হরমোন কম হলে মানুষ বেটে হয়।

একেএম/এমএএস