অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে সময় ক্ষেপণ করছে আসামিপক্ষ
‘আসামিপক্ষের আইনজীবীদের অপ্রাসঙ্গিক কথা বলার কারণে নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট সাক্ষীদের জবানবন্দি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না’, এমন মন্তব্য করেছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম।
কক্সবাজারের টেকনাফে আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার নির্ধারিত দ্বিতীয় ধাপের চার দিনের সাক্ষ্য গ্রহণের দ্বিতীয় দিন শেষ হয়েছে। সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আদালত চত্বরে এসব কথা বলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
ফরিদুল আলম বলেন, সাক্ষীদের যে প্রসঙ্গে জেরা করার কথা, তা না করে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলার কারণে এ সাক্ষ্যগ্রহণে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে যদি আসামিপক্ষ ন্যায়বিচারের স্বার্থে সময় ক্ষেপণ না করে, তাহলে মামলার জন্য ভালো হয়।
মিডিয়া ট্রায়ালের বিষয়ে জানতে চাইলে পিপি বলেন, অভিযোগটা আসামিপক্ষ করেছে। আমরা তো জেনারেল বিষয়ে কথা বলছি। কিন্তু তারা বারবার বলে যাচ্ছে।
গেল দুই দিনে সাক্ষী মোহাম্মদ আলী ও কামাল হোসেনের জবানবন্দি গ্রহণ এবং জেরা শেষ হয়েছে। নির্ধারিত বাকি ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় ধাপের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য আছে। যথানিয়মে আদালতে হাজির করা হয়েছে। এ মামলার ১৫ আসামিকে উপস্থিত করা হয়।
এর আগে গেল ২৩, ২৪ ও ২৫ আগস্ট তিন দিনে মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস ও দুই নং সাক্ষী শাহেদুল ইসলাম সিফাতের জবানবন্দি গ্রহণ করেন আদালত। পরে তাদের দীর্ঘ সময় জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলামকে (সিফাত) পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করে। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এই দুজন পরে জামিনে মুক্তি পান।
সিনহা হত্যার ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়, একটি রামু থানায়। ঘটনার পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন পুলিশের ৯ সদস্য। তারা হলেন বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেবনাথ।
অপর আসামিরা হলেন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আব্দুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিষবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশের করা মামলার সাক্ষী নুরুল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এর আগে তাদের তিন দফায় ১২ থেকে ১৫ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।
মুহিববুল্লাহ মুহিব/এনএ