মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান

কক্সবাজারের টেকনাফে আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার নির্ধারিত দ্বিতীয় ধাপের চারদিনের সাক্ষ্য গ্রহণের প্রথমদিন শেষ হয়েছে। প্রথমদিনে মোহাম্মদ আলী নামে একজন তার জবানবন্দি দিয়েছেন। তারপরই তাকে জেরা করে ১৫ আসামির আইনজীবীরা।

রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে শুরু হওয়া এ সাক্ষ্য গ্রহণ চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, দ্বিতীয় ধাপের প্রথম দিনে মোহাম্মদ আলী সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাকে জেরাও করেছে ১৫ আসামির আইনজীবী। তবে আজকে আদালত উভয়পক্ষকে গণমাধ্যমে কথা বলতে সতর্ক করেছেন।

নির্ধারিত তিনদিনের পর সাক্ষ্যগ্রহণ মূলতবি করে ৫,৬,৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর এ চারদিন দ্বিতীয় ধাপের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধায্য করেন। যথা নিয়মে আদালতে হাজির করা হয়েছে এ মামলার ১৫ আসামিকে উপস্থিত করা হয়।

এর আগে গেল ২৩, ২৪ ও ২৫ আগস্ট তিনদিনে মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস ও ২নং সাক্ষী শাহেদুল ইসলাম সিফাতের জবানবন্দি গ্রহণ করেন আদালত। পরে তাদের দীর্ঘ সময় জেরা করে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলামকে (সিফাত) পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করে। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এই দুজন পরে জামিনে মুক্তি পান।

সিনহা হত্যার ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়। একটি রামু থানায়। ঘটনার পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানা পুলিশের বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলাই তদন্তের দায়িত্ব পায় র‍্যাব।

২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র‍্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।

আসামিদের মধ্যে রয়েছেন পুলিশের ৯ সদস্য। তারা হলেন, বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেব নাথ।

অপর আসামিরা হলেন, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আব্দুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিষবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশের করা মামলার সাক্ষী নুরুল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

গ্রেফতার হওয়া আসামিদের মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এর আগে আসামিদের তিন দফায় ১২ থেকে ১৫ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।

মুহিববুল্লাহ মুহিব/এমএএস