একসময় কেউই তেমন চিনত না বাঁধটিকে। কিন্তু এখন সবাই চেনে। পরিবর্তন হয়ে গেল এর পারিপার্শ্বিক অবস্থা। বাঁধটিতে বেড়েছে মানুষের পদচারণা। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, পরিবার-পরিজন, সবাই একটু সৈকতের বা পাহাড়ি ঝরনার আনন্দ উপলব্ধি করতে অবসর সময়ে চলে আসেন এখানে। আর তাই এ বাঁধটির নামকরণ হয়ে গেছে ‘মিনি কক্সবাজার’।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের কুমারপুর গ্রামে ভুল্লী বাঁধে প্রতিদিন পর্যটকরা আসেন দল বেঁধে। কক্সবাজারের মতো নৈসর্গিক কোনো চিহ্ন না থাকলেও পানির স্রোতে আনন্দিত হয়ে দর্শনার্থীরা এ বাঁধের নাম দিয়েছেন মিনি কক্সবাজার।

শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের কুমারপুর গ্রামে ভুল্লী বাঁধে গেলে পর্যটকের ভিড় ও জলকেলির দৃশ্য চোখে পড়ে। একটুকরো প্রশান্তি যেন চেয়ে গেছে সবাইকে। বিশেষ করে তরুণদের প্রাণ খুলে আনন্দ-উৎসব আর হইহুল্লোড় করে গোসল করতে দেখা গেছে।

জানা গেছে, দিনের পর দিন বেড়েই চলছে এই বাঁধে উপচে পড়া দর্শনার্থীদের ভিড়। বর্ষা মৌসুমে ভুল্লী বাঁধটি এক নজর দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এসে ভিড় জমায়। তবে এই বাঁধে যাওয়ার রাস্তাটি দ্রুত সময়ে সংস্কার করা ও ভুল্লী নদীর এ বাঁধ এলাকাটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন বাঁধে ঘুরতে আসা বিনোদনপ্রেমীরা।

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, সেচ-ব্যবস্থার জন্য ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নে ভুল্লী বাঁধ নির্মাণ করা হয়। বর্ষা মৌসুমে এ বাঁধে পানি ধরে রাখা হয়। পরে খরা মৌসুমে সে পানি আশপাশের কৃষকরা তাদের ফসলি জমিতে ব্যবহার করেন। এ ছাড়া জেলেরা এ বাঁধে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। বাঁধটিতে রয়েছে ১০টি জল কপাট।

জলধারা প্রবাহের জন্য বাঁধটিতে কয়েকটি ধাপে স্তর রয়েছে। এসব স্তর বেয়ে জলরাশি চলাচল করে প্রতিনিয়ত। জলধারা প্রবাহের সময় যে শব্দ সঞ্চার হয় চারদিকে তা ঠিক সমুদ্রের গর্জনের মতোই। যা মানুষের মন কেড়ে নেয়। বাঁধে পরিবারসহ ঘুরতে এসে আনন্দে মেতে উঠেছেন সবাই। তবে বাঁধটিতে যাওয়ার রাস্তাটি বর্ষ মৌসুমে কাদা লেগে থাকায় অনেকেরই যাতায়াতের সময় পড়েছে বিপদে। একদিকে যেমন দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন দর্শনার্থীরা, অন্যদিকে সেই বাঁধে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছেন স্থানীয় অনেক জেলেই। 

বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন ইসমাইল হোসেন। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, অনেকের মুখে শুনেছি এই বাঁধারে কথা। আজ এলাম বন্ধুদের নিয়ে। অনেক মজা করলাম। তবে এখানে কোনো বসার ব্যবস্থা নেই। জেলার আকর্ষণীয় একটা স্থান। এটাকে যদি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়, তাহলে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়বে।

আসাদুজ্জামান আসিক নামের এক দর্শনার্থী বলেন, যাচ্ছিলাম বাঁধের দিকে, তার আগেই কাদায় কাপড় নষ্ট হয়ে গেল। রাস্তাটির বিভিন্ন জায়গায় কাদায় ভরা থাকে। এখানে মোটরসাইকেল নিয়ে অনেকে যাচ্ছেন, কেউবা অটোতে, যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই এটাকে দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন বলে মনে করি।

পরিবারসহ বাঁধে ঘুরতে এসেছেন আম্বিয়া খাতুন নামের এক দর্শনার্থী। তিনি বলেন, লকডাউনের পর এখানে আজ প্রথম এলাম পরিবারসহ। এখানে ছেলেরাই নেমে গোসল করছে। তবে মেয়েদের নেমে একটু পানি ছুঁয়ে আনন্দ করার মতো কোনো ব্যবস্থা নেই। এখানে মেয়েদের নিরাপত্তার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। যদি প্রশাসন আমাদের বিষয়ে একটু খেয়াল করে ব্যবস্থা নেয়, তাহলে আমরা সব সময় আসতে পারব।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছর আমরা সেই বাঁধে গিয়ে বেশ কিছু ব্যানার লাগিয়ে দিয়েছিলাম। সেখানে যেসব দর্শনার্থী আসে, তাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা সেখানে একটি স্বেচ্ছাসেবী টিম করে দিয়েছি। এ ছাড়া এটাকে একটি পর্যটন স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে একটা সিদ্ধান্ত গহণ করা হয়েছে।

মো. নাহিদ রেজা/এনএ