বাড়ি-ঘর তলিয়ে গেলেও ত্রাণ জোটে না আমাগো ভাগ্যে
উজানের ঢল আর টানা বর্ষণে পাবনায় যমুনা নদীর পানি এক সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করায় ফসল ও সবজির খেত তলিয়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি কৃষি বিভাগের। এদিকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলেও ত্রাণ পাচ্ছেন না বলে বানভাসিদের অভিযোগ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উত্তরাঞ্চলীয় নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে যমুনা নদীর পানি বেড়ে নগরবাড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর পদ্মা নদীর পানি পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং বড়াল নদের পানি কিছুটা বেড়ে বড়াল ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, গত মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে যমুনার পানি নগরবাড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পরের দিন (০১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নগরবাড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পানি দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।
কৃষি অধিদফতরের তথ্য মতে, পাবনা সদর, ঈশ্বরদী, বেড়া, সুজানগরসহ কয়েকটি উপজেলার নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে সবজি ও ফসলের খেত তলিয়ে গেছে। অনেক স্থানে বাসা-বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় নিত্যপ্রযোজনীয় কাজে অসুবিধা হচ্ছে। কিছু স্থানে ভাঙন ও পানি বৃদ্ধির ফলে নদী তীরবর্তী মানুষ তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন।
সদরের আশুতোষপুর এলাকার বাসিন্দা মাসুদ রানা, আব্দুল করিম, আরিফ হোসেন বলেন, প্রতি বার বর্ষার সময়ে পদ্মা ও যমুনা ভয়াল রূপ ধারণ করে। রাতের আঁধারে আমাদের জায়গা-জমি, বাড়ি-ঘর নদীতে হারিয়ে যায়। এটা কেউ দেখে না। আবার ত্রাণও জোটে না আমাগো ভাগ্যে।
বেড়া উপজেলার নতুন ভারেঙ্গা এলাকার ফারুক হোসেন জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে এলাকার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। কেউ ত্রাণ দেয়নি। অনেক মানুষ অসহায় জীবনযাপন করছে।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা আব্দুল কাদের ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের জেলায় শুধু চরাঞ্চলের জমিগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। উঁচু জমির ফসল সবজির তেমন ক্ষতি হয়নি। প্রায় ১০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। পানি নেমে যাওয়ার পরে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে ক্ষতির পরিমাণ অনুযায়ী আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
পাবনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, বন্যা কবলিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যেকোনো সময় ত্রাণ পৌঁছে যাবে। আজ দুপুরে উপজেলায় জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। এ সময় উপজেলাভিত্তিক ত্রাণ সামগ্রী বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
রাকিব হাসনাত/এসপি