ফ্রিল্যান্সার তুষারের সেরা হয়ে ওঠার গল্প
চাকরি না করেও যে স্বাধীনভাবে কিছু করা যায়, তার আধুনিক পরিচিতি ফ্রিল্যান্সিং। একটু দুরদর্শিতা, পরিশ্রম ও ধৈর্য বদলে দিতে পারে অনলাইন এবং অফলাইন জীবন। যে কেউ সময়ের সঙ্গে লক্ষ্য ঠিক রেখে চেষ্টা করলে হতে পারবে সেরা ফ্রিল্যান্সার।
হাজারো তরুণের চোখে হয়ে উঠবে আইডল। লক্ষ্য অটুট থাকলে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও মিলবে সফল ফ্রিল্যান্সারের মর্যাদা। এমনই একজন তরুণ তরিকুল ইসলাম তুষার।
বিজ্ঞাপন
বয়স যখন বিশ পার হয়নি, তখনই তার স্বপ্ন বুনন। সময়টা ২০১৩ সাল। এ বয়সেই নিজে কিছু করার ইচ্ছা থেকে ফ্রিল্যান্সিং জগতে ঢুকে পড়েন। যদিও শুরুর অভিজ্ঞতাটা একটু ভিন্ন। মুখোমুখি হতে হয় নানা ধরনের বাধা-বিপত্তির। তবুও হাল ছাড়েননি তুষার।
দীর্ঘ সাত বছরের কঠোর পরিশ্রম ও ধৈর্য। সঙ্গে একটু একটু এগিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা তাকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। বর্তমানে তিনি কাজ করছেন ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেস ফাইবার এবং আপওয়ার্কের টপ রেটেড ফ্রিল্যান্সার হিসেবে।
ফ্রিল্যান্সার তরিকুল ইসলাম তুষার অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে মূলত সার্স ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের (এসইও) ওপর কাজ করছেন। এতে আপওয়ার্কের জরিপে বাংলাদেশ র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম অবস্থানটি এখন তার। দীর্ঘ প্রচেষ্টা, পরিশ্রম আর ধৈর্যের সফলতায় বদলে যাচ্ছে তুষার। এখন তার প্রতি মাসে গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকার মতো আয় হচ্ছে।
তুষারের স্বপ্ন কর্মহীন বেকার যুবকদের জন্য কিছু করা। গ্রামের স্বল্প আয়ের পরিবারে বেড়ে ওঠা তরুণদের ফ্রিল্যান্সিং পেশায় দক্ষ করে তুলে বেকার সমস্যা ঘোঁচানোর পথ দেখাতে তার আগ্রহের কমতি নেই। তরুণদের ফ্রিল্যান্সিংয়ে উদ্বুদ্ধ করতে নিজ গ্রামে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন। যেখান থেকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ফ্রিল্যান্সার তৈরি হচ্ছে।
এছাড়াও অনলাইনে ‘Toriqul Islam Tusher’ নামে ফেসবুক পেজ এবং ‘Learn Freelancing with Tusher’ নামক ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে তার। সেখানে লাইভ ক্লাস নেয়ার মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে তার এই ক্ষুদ্র উদ্যোগ খুব শিগগিরই একটি বৃহৎ কর্মকাণ্ডে রূপ নেবে বলে আশাবাদী তুষার।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের আমোদপুর গ্রামে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম তুষারের। রংপুর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে প্রথমধাপের শিক্ষাজীবন চুকিয়ে ভর্তি হন গাইবান্ধা সরকারি কলেজে। সেখান থেকে বি.এ পাস করেন। এরপর ২০১৩ সালে প্রথম ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকে গুগল ও ইউটিউব ঘাঁটাঘাঁটি করতে থাকেন। দিনে দিনে অনেক কিছুই তার রপ্ত হতে থাকে।
২০১৫ সালে একটি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিশ হয়ে কাজ করার সুযোগ পান তিনি। তখনই ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জগতটা বাড়তে থাকে তার। সেখানে অল্প বেতনে দুই বছর চাকরি করার পর ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পান। চাকরিরত অবস্থায় তুষার ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেস ফাইবার ও আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট খুলে টুকটাক কাজ চালিয়ে যান। এরপর ২০১৭ সালে চাকরি ছেড়ে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে মনোনিবেশ করেন।
তুষার বলেন, শুরুতে কোনো কিছু বুঝতাম না। ইন্টারনেটে গুগল, ইউটিউব ঘেঁটে ঘেঁটে শিখতে লাগলাম। কিন্তু সফলতার থেকে ব্যর্থতার ঝুলিটাই বড় হতে লাগলো। একটু হতাশ হয়ে গেলাম। তবে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসিনি। এখনকার মতো তখন এতো কোর্সের ব্যবস্থাও ছিল না। অনেক ইচ্ছে ছিল ওয়েভ-ডেভেলোপমেন্ট-এর ওপর কাজ করব। কিন্তু সেটাতে খুব বেশি সফলতা না আসায় ডিজিটাল মার্কেটিং-এর ওপর কাজ করতে থাকি। এরপর পর্যাক্রমে এসইও-এর ওপর কাজ শিখে সেটির ওপর কাজ চালিয়ে যাই।
এখন তো পুরো দমে কাজ করে যাচ্ছেন তুষার। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারায় সফলতাই তার সবচেয়ে প্রাপ্তি। বর্তমানে প্রতিমাসে তিনি অর্ধ লক্ষ টাকা আয় করলেও, কিছুদিনের মধ্যে তা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদী। কারণ আগামী দিনে ফ্রিল্যান্সিং বর্তমান সময়ের চেয়ে কয়েকগুন বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। ভবিষ্যতে ইচ্ছে আছে একটা স্টার্টআপ উদ্যোগ চালু করা।
তরুণ এ ফ্রিল্যান্সার জানান, আগামীর বাংলাদেশ হবে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর। এজন্য সামনের দিনগুলোতে ডিজিটাল মার্কেটিং-এর গুরুত্ব অনেক বেশি। করোনা মহামারির কারণে দেশের মানুষ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে কয়েক ধাপ এগিয়ে গেছে। পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং কাজের ক্ষেত্রে ঝুঁকে পড়ছে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো।
ফ্রিল্যান্সিংয়ে আগ্রহীদের উদ্দেশ্যে তুষারের পরামর্শ, ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে। নিজেকে ঠিক করে নিতে হবে কোন বিষয়ে আপনি দক্ষ। যে বিষয়ের ওপর আপনি কাজ করতে আগ্রহী সেই বিষয়ের ওপর ভাসা-ভাসা ধারণা নিয়ে মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজ করা সম্ভব নয়। এতে হতাশ হতে হবে। এজন্য দক্ষতা অর্জন এবং ধৈর্য ধারণের বিকল্প নেই।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস