টাঙ্গাইলের মধুপুরগড়, সখীপুর ও ঘাটাইলসহ অন্যান্য বনভূমির প্রায় ৩৯ হাজার একর দখলে নেই বন বিভাগের। ফলে বেদখলে থাকা এসব বনভূমি উদ্ধারে তৎপর নেই কর্তৃপক্ষের। কর্মকর্তাদের দুর্নীতি এবং স্থানীয়দের ক্ষমতার প্রভাবে বনভূমি বেদখলে চলে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ আছে, স্থানীয়রা বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে বন উজার করে সেখানে সামাজিক বনায়নের নামে কৃষিকাজ, স্থায়ী আধা-পাকা স্থাপনা, মুরগির খামারসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছে। এক্ষেত্রে দায়সারাভাবে বন বিভাগ ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও প্রভাবশালীরা রয়েছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রতিনিয়তই কাটা হচ্ছে গজারি ও শাল গাছ। এ ছাড়া সামাজিক বনায়নের ফলে দিন দিন বনভূমির আকার ছোট হয়ে যাচ্ছে। তবে বন বিভাগের দাবি, অবৈধভাবে দখলকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলাসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

জেলা বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১ লাখ ২২ হাজার ৮৭৬ একর বনভূমি রয়েছে। এর মধ্যে মির্জাপুর উপজেলায় ৭ হাজার ৫৭৬ একর, কালিহাতী উপজেলায় ৬৫৯ একর, ঘাটাইলে ২১ হাজার ৮৫৫ জন, সখীপুরে ৪৭ হাজার ২২০ একর এবং মধুপুরগড়ে ৪৫ হাজার ৫৬৫ একর বনভূমির জায়গা রয়েছে। এসব বনভূমি দেখভালে রয়েছে ৯টি রেঞ্জে অফিস। তবে এসব বনবিভাগের জায়গা থেকে ৩৮ হাজার ৬৬৬ একর জায়গা বেদখল হয়ে আছে। ফলে এসব বেদখল জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এ ছাড়া দোখলা রেঞ্জের অধীন গত দুই বছরে ৯৩৩ একর বনভূমি উদ্ধার করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সখীপুর উপজেলায় চারটি রেঞ্জের ১৪টি বিটের আওতাধীন সংরক্ষিত শাল গজারি বনের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে স্থায়ী বসবাস করছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ।

মধুপুর গড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শ্যামল মানখিন বলেন, আদিবাসীরা বিট্রিশ আমল থেকে এই বনভূমিতে বসবাসের পাশাপাশি বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। ফলে সেই আমল থেকে আদিবাসীদের জায়গার ওপর রাজা জমিদারদের পত্তন দিতেন। তাদের জায়গা এসএ খতিয়ানসহ আরএস খতিয়ান থাকার পরও খাজনা খারিজ হচ্ছে না। বন বিভাগের সীমানার মধ্যে পড়ার কারণে কর্তৃপক্ষ মাঝে মধ্যে তাদের উচ্ছেদ করার জন্য আসে।

দোখলা রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল আহাদ বলেন, দোখলা রেঞ্জে ১৮ হাজার ৮৩৪ একর বনভূমির মধ্য ৬ হাজার ৯৫৭ একর বহু বছর আগে দখল হয়ে গেছে। বেহাত বনভূমি উদ্ধারে উচ্ছেদ মোকদ্দমার প্রস্তাব দায়ের করা হয়েছে। দোখলা রেঞ্জে শুধু ১০ জন ব্যক্তির দখলেই এক হাজার একরের বেশি বনভূমি রয়েছে। মধুপুর বনের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে দখল উচ্ছেদ করে বনায়নের বিকল্প নেই। 

টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক জানান, বনভূমির জমি উদ্ধারের জন্য সম্প্রতি দুই হাজারের বেশি উচ্ছেদ মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া বন কর্মকর্তারা দখলকারীদের চিহ্নিত করে তালিকা প্রণয়ন করছে। 

তিনি আরও জানান, গারো সম্প্রদায়ের লোক সেখানে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে। তারা নিজেদের বাসস্থান দাবি করে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে আরও মজবুতভাবে বসকিত গড়তে চাচ্ছে। এদের উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাব চলে গেলে উচ্ছেদ কাজ শুরু করা হবে।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো.আতাউল গনি বলেন, করোনাকালীন উচ্ছেদ অভিযানে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। উচ্ছেদ অভিযান নিয়মিত চলমান আছে। করোনার প্রাদুর্ভাব শেষ হলে বেদখলে থাকা ভূমি উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। 

এসপি