ফরিদপুরে ১৮ দিন ধরে পানিবন্দি ২৩৪ গ্রাম
গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে ফরিদপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। ফরিদপুর সদর, চরভদ্রাসন, ভাঙ্গা ও সদরপুর থানার ২৩৪ গ্রামের মানুষ ১৮ দিন ধরে পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
ভেঙে গেছে সড়ক। হয়েছে ফসলের ক্ষতি। এইসব এলাকাসহ মধুখালী ও আলফাডাঙ্গার টগরবন্দ ইউনিয়নেও দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। চাহিদার তুলনায় ত্রাণ তৎপরতা তেমন চোখে পড়ছে না।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, ফরিদপুর সদরের তিনটি, চরভদ্রাসনের চারটি, সদরপুরের দুটি এবং ভাঙ্গার একটি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে মধুখালী ও আলফাডাঙ্গার টগরবন্দ ইউনিয়নে।
এই ১০ ইউনিয়নের ২৩৪ গ্রামের ১৮ হাজার ৬০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ফরিদপুর সদরের ডিক্রির চর ইউনিয়নে পানিবন্দি মানুষ বেশি। এখানের ১ হাজার ৮০০ পরিবার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে রয়েছেন।
ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, ইউনিয়নের সব সড়ক ডুবে যাওয়ায় নৌকাই ভরসা। সবার নৌকাও নেই তাই সমস্যার শেষ নাই এখানের বাসিন্দাদের। বানভাসি মানুষ গবাদিপশু নিয়ে অবর্ণনীয় বিপদে পড়েছে।
ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাকুজ্জামান বলেন, পানিতে আমার ইউনিয়নের একশ একর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। ইউনিয়নে তিনটি সড়কের বিশাল অংশ পানির তোড়ে ধসে গেছে।
বন্যাদুর্গতদের মধ্যে যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে তা অপর্যাপ্ত বলে জানান সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানগণ। সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নে এ পর্যন্ত ৭৫০ পরিবারকে শুকনো খাবার এবং ২৬ বস্তা গোখাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। চর মাধবদিয়াতে ১০০ জনকে শুকনো খাবার ও ১০ বস্তা গোখাদ্য দেওয়া হয়।
ডিক্রির চর ইউনিয়নে ৬৫০ জনকে শুকনো খাবার ও ২০ বস্তা গোখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে। চরভদ্রাসনের চর ঝাউকান্দায় ২০০ পরিবারকে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। নাসিরাবাদে ৭৫০ জনকে শুকনো খাবার ও ২৬ বস্তা গোখাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।
অন্য পাঁচ ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান অভিযোগ করে বলেন, তাদের ইউনিয়নে শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত সরকারি উদ্যোগে কোনো ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কিংবা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
চরভদ্রাসনের বালিয়াডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর সিকদার (৪৮) বলেন, আমাদের বাড়ির চারপাশে থৈ থৈ পানি। ঘরে পানি ঢুকে গেছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় ঘরে চৌকি উঁচু করে থাকছি। পানি এভাবে বাড়তে থাকলে ঘরের চৌকিতেও থাকতে পারব কি না সেই চিন্তায় আছি।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম সাহা বলেন, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি ৮ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমfর ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আরও তিন থেকে চার দিন পানি বাড়তে থাকবে। ভাঙন রোধে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এমএসআর