সুন্দরবনে মধু সংগ্রহে রেকর্ড
সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহে করোনার প্রভাব পড়েনি। বরং মধু সংগ্রহে অতীতের দুই বছরের রেকর্ড অতিক্রম করেছে। এ বছর সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে ২১৫৯ দশমিক ১৫ কুইন্টাল মধু সংগ্রহ হয়েছে। বন বিভাগ বলছে, বনের পরিবেশ শান্ত থাকায় মৌমাছিরা নিরিবিলি প্রাকৃতিক পরিবেশ পেয়েছে। এ কারণে চাকে মধুর পরিমাণ বেড়েছে। সংগ্রহও হয়েছে বেশি।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জ কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহ হয়েছিল ১৪১৯ দশমিক ৫০ কুইন্টাল। ২০১৯-২০ অর্থবছরে হয়েছে ২০০৬ দশমিক ৬০ কুইন্টাল। ২০২০-২১ অর্থবছরে মধু আহরিত হয়েছে ২১৫৯ দশমিক ১৫ কুইন্টাল। এ বছর মধু সংগ্রহের জন্য সুন্দরবন গেছেন চার হাজার মৌয়াল।
বিজ্ঞাপন
সুন্দরবনের মৌয়াল শহিদুল গাজী (৫৫)। তিনি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের দাতিনাখালি গ্রামের বাসিন্দা। প্রতি বছরই এ মৌসুমে বন বিভাগ থেকে অনুমতি নিয়ে সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহ করেন।
মৌয়াল শহিদুল গাজী জানান, প্রতি বছর বন বিভাগ থেকে বিএলসি নিয়ে দলের সঙ্গে আমি মধু সংগ্রহের জন্য বনে যায়। করোনার কারণে সুন্দরবনে পর্যটক নিষিদ্ধ থাকায় সুন্দরবনের পরিবেশ ছিল শান্ত। এ ছাড়া সুন্দরবনের খলিশা, গরান, সুন্দরী, গেওয়া, বাইন, গিবো ফুলও অনেক বেশি ছিল। অন্য বছরের থেকে এ বছর মৌচাকে মধুর পরিমাণ বেশি হয়েছে।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালীনি ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান আহম্মেদ জানান, প্রতি বছর সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের জন্য তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার মৌয়াল প্রবেশ করেন। তবে এ বছর করোনার সময়ে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। চার হাজার মৌয়াল এবার মধু সংগ্রহ করতে সুন্দরবন গেছে। অন্য বছরের তুলনায় ৫০০ মৌয়াল বেশি গেছে।
মূলত দুটি কারণে এ বছর বেশি মধু সংগ্রহ হয়েছে। একটি হলো- বেশি মৌয়াল সুন্দরবনে প্রবেশ ও আরেকটি সুন্দরবনের শান্ত পরিবেশ। ১ এপ্রিল থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের মৌসুম।
সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, গত দুই বছরের চেয়ে এ বছর সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহ বেশি হয়েছে। পর্যটক নিষিদ্ধ থাকায় বনের পরিবেশ শান্ত ছিল এবং বেশি মৌয়াল বনে যাওয়ায় মধু সংগ্রহ বেশি হয়েছে। তাছাড়া গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে সুন্দরবনে মৌমাছির চাকের ক্ষতি হয়েছিল। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে চাকের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি বিপণন অধিদফতরের কর্মকর্তা সালেহ মো. আব্দুল্লাহ্ বলেন, সারাদেশেই সুন্দরবনের মধুর চাহিদা ও সুনাম রয়েছে। মধুতে অনেক ঔষধি গুণাগুণ থাকে। সরকারিভাবে মধুর কোনো বাজারদর নেই। ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে দরদামের ওপর মূল্য নির্ভর করে। কোথাও কেউ ভেজাল মধু বিক্রি করছে বা কারো কাছে রয়েছে এমন অভিযোগ পেলে প্রাশাসনকে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি।
ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সাতক্ষীরার উপব্যবস্থাপক গোলাম সাকলাইন বলেন, ২০১৩ সালে মধু প্রক্রিয়াজাতকরণ সেন্টার নামে সাতক্ষীরা বিসিকে দুটি প্লট বরাদ্দ রাখা হয়। তবে প্রকল্পটি সাতক্ষীরায় বাস্তবায়িত হয়নি। প্রকল্পটি সাতক্ষীরা থেকে নিয়ে রাজধানীর ধামরাই বিসিক শিল্পনগরীতে মধু প্রক্রিয়াজাতকরণ সেন্টার করা হয়েছে। চেষ্টা করছি সাতক্ষীরায়ও একটি মধু প্রক্রিয়াজাতকরণ সেন্টার করার। সেলক্ষ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে এখনও কোনো নির্দেশনা আসেনি।
তিনি বলেন, এটি চালু হলে সুন্দরবন থেকে যেসকল মধু আহরিত হয় বা মৌমাছি চাষের মাধ্যমে চাষিরা যেসকল মধু সংগ্রহ করেন সেই মধু এখান থেকে প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করতে পারবেন। এতে সুবিধা হবে, মধুটি দীর্ঘদিন রাখলেও নষ্ট হবে না। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরার কলারোয়া ও সদরের কাটিয়া এলাকায় দুই উদ্যোক্তা ব্যক্তি উদ্যোগে মধু প্রক্রিয়াজাতকরণ মেশিন স্থাপন করেছেন।
আকরামুল ইসলাম/এসপি