ডাকাতির জন্য ঘরে ঢুকে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটাত চক্রটি। ইতোমধ্যে আন্তজেলা ডাকাত দলের সাত সদস্যকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। তারা ডাকাতি করার জন্য বাসা ভাড়া করে বরিশালে থাকত।

বৃহস্পতিবার (০২ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টায় নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের (বিএমপি) কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান।

তিনি জানান, সিটি করপোরেশন এলাকার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের চহঠার নিজ বাসায় গত ১১ আগস্ট দিবাগত রাতে খুন হন অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা এবং নব বায়ো-হোমিও চিকিৎসালয়ের মালিক অধ্যাপক (অবসরপ্রাপ্ত) ডা. মঞ্জুর মোর্শেদ (৭০)। ঘটনাটি সম্পূর্ণ ক্লুলস ছিল। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে নগর গোয়েন্দা পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম ছায়া তদন্ত শুরু করে। পরে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আন্তজেলা ডাকাত দলের একটি চক্রকে শনাক্ত করা হয়।

এরপর সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার (০১ সেপ্টেম্বর) অভিযান চালিয়ে নগরীর শের-ই-বাংলা সড়কের একটি ভাড়া বাসা থেকে তরিকুল ইসলাম শাকিব (২৮) এবং আলমগীর হাওলাদারকে (৪০) আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে দুজন স্বীকার করে তারাসহ ডাকাত দলের অন্যান্য সদস্যরা ডাকাতির জন্য গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে। আটক দুজনের তথ্যের ভিত্তিতে পটুয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে অপর সদস্য জামালকে আটক করা হয়।

শাহাবুদ্দিন খান বলেন, এই চক্রটি শুধু ডা. মঞ্জুর মোর্শেদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত এমন নয়, তার আগের মাসে অর্থাৎ ৭ জুলাই ফিসারী রোড এলাকার মনোয়ার হোসেনের বাসায় ঢুকে ডাকাতি করে তারা। ওই সময় তারা নগদ ৫৩ হাজার টাকা এবং ১৪ ভরি স্বর্ণ নিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছে।

দুটি ঘটনাই নগরীর এয়ারপোর্ট থানায় সংঘটিত হয় উল্লেখ করে বিএমপি কমিশনার বলেন, আটকদের কাছ থেকে ঘর ভাঙার যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা নিশ্চিত হয়েছি, সংঘবদ্ধ এই ডাকাত চক্রের কাছে আগ্নেয়াস্ত্রও রয়েছে। সেগুলো উদ্ধার এবং চক্রের অন্যান্য সদস্যদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এয়ারপোর্ট থানা এলাকায় ঘটে যাওয়া ঘটনা দুটি নগরীতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে বিধায় পুলিশের তৎপরতা জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় বলে জানান শাহাবুদ্দিন খান।

এর আগে দুপুরে আটক তিন ডাকাত সদস্যকে দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। গ্রেফতারদের রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ।  

নিহত ডা. মঞ্জুর মোর্শেদের ছেলে সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জগলুল মোর্শেদ প্রিন্স বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধী শনাক্ত হয়েছে। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমার পরিবারের যে ক্ষতি হয়েছে সেই ক্ষতিতো কখনো পোষানো যাবে না।  কিন্তু অন্য কেউ যেন এভাবে পিতৃহারা না হয় সেই দোয়া করি।

তিনি আরও বলেন, আমার বাবা খুন হওয়ার পরে আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হত্যাকাণ্ডের দায় আমার ওপরে চাপাতে চেয়েছে। এর চেয়ে বড় কষ্টের আর কিছু একজন ছেলের জন্য থাকতে পারে না। আমি মনে করি সত্য উদ্ঘাটিত হবেই। আজকে সেই সত্য উদ্ঘাটিত হলো। আমরা জানতামও না গোয়েন্দা পুলিশের টিম অপরাধীদের শনাক্ত এবং গ্রেফতার করেছে। 

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর