মৃত্যুর আগে নিজ হাতে ঘর ও ঘরের মধ্যে কবর তৈরি করেন তৈয়ব আলী মোল্লা

মাগুরায় গোপনে ঘরের মেঝেতে দাফনের ৯ দিন পর তৈয়ব আলী মোল্লা (৭৫) নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার (৩০ আগস্ট) মরদেহটি উদ্ধার করে গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। 

গত ২২ আগস্ট তৈয়ব আলী মোল্লার মৃত্যুর পর তার মরদেহ গোপনে নিজ ঘরের মেঝেতে দাফন করে সেখানে প্লাস্টার করে দেওয়া হয়েছিল। রোববার (২৯ আগস্ট) বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। 

পুলিশ, মৃতের স্বজন ও প্রতিবেশীরা জানান, গত ২২ আগস্ট দুপুর পৌনে ২টার দিকে বার্ধক্যজনিত কারণে নিজ বাড়িতে মারা যান মাগুরা পৌর এলাকার তৈয়ব আলী মোল্যা। তিনি জেলা সদরের পৌর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিনাথপুরের কারিগর পাড়ার বাসিন্দা।  তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী একতলা বসতঘরের মেঝেতে গোপনে মরদেহ দাফন করা হয়। তিনি অজ্ঞাত কোনো আধ্যাত্মিক ব্যক্তির অনুসারী ও ভক্ত ছিলেন। মৃত্যুর পর তাকে পাশের কক্ষের কংক্রিটের মেঝের ওপর স্বজনদের কবর দিতে বলে যান। তাই মৃত্যুর পর স্বজনরা গোপনে কবর দেন। সোমবার বেলা ১১টার দিকে ঘরের দরজা ভেঙে পাকা মেঝে খুঁড়ে মরদেহটি তুলে ধর্মীয় বিধান মতে কবরস্থানে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। 

কাশিনাথপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তৈয়ব আলীর বাড়ির সামনে উৎসুক জনতার ভিড়। একটি কক্ষের জানালা থাকলেও আরেকটি কক্ষের কোনো জানালা নেই। দুই রুমের একটি কক্ষের দরজা প্লাস্টার করা। সেটি ভেঙে ঘরের মধ্যে ঢুকে পাকা মেঝে খুঁড়ে লোকজন মরদেহ তোলার কাজ করছেন। মেঝের ওপর মরদেহের  চারপাশে ১০ ইঞ্চি প্রশস্ত ইটের গাঁথুনি দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি ঢালাই করে ওপরের  অংশ ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। মরদেহ দাফন শেষে দরজা ইট গেঁথে প্লাস্টার করে বাইরে থেকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। 

এলাকাবাসী জানায়, তৈয়ব আলী মোল্লা অবিবাহিত ছিলেন। একটানা ৩০ বছর তিনি নিরুদ্দেশ ছিলেন। এক বছর আগে তিনি শহরের ছোট ভাই কাশেম আলীর বাড়িতে আসেন। তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতেন না। মিশতেন না। নিজ হাতে বাড়িতে দুই কক্ষের একটি ভবন তৈরি করেন।

তৈয়ব আলী মোল্লা

তৈয়ব আলী মোল্লার ছোট ভাই কাশেম আলী জানান, বড় ভাই (তৈয়ব) মৃত্যুর আগে নিজ হাতে ঘর ও ঘরের মধ্যে কবর তৈরি করে গেছেন। তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মরদেহ ঘরের মধ্যে দাফন করা হয়েছিল।  

তৈয়ব আলী মোল্লার অনুসারী ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার আমজাদ আলী বলেন, ঘরের মধ্যে লাশ দাফন নতুন কিছু নয়। অতীতে অনেকেরই লাশ ঘরের মধ্যে দাফন করা হয়েছিল।

তবে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় হৈ চৈ পড়ে যায়। তাকে বাইরে কবরস্থানে দাফন করার দাবি জানায় এলাকার লোকজন। পরে পুলিশ ও এলাকাবাসীর মধ্যস্থতায় মরদেহ কবরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে মাগুরা পৌরসভার প্যানেল মেয়র মকবুল হাসান মাকুল জানান, প্রশাসন, এলাকার  গণ্যমান্য ব্যক্তি ও আলেমদের সঙ্গে আলোচনা করে মরদেহটি ঘরের মেঝে থেকে তুলে নতুন করে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এলাকাবাসী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে মরদেহটি উত্তোলন করে ইসলামের বিধি মেনে দাফন করা হয়েছে। 

আরএআর