দিনাজপুরে মা ও ছেলেকে অপহরণের পর ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপারসহ পাঁচজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

কারাগারে পাঠানো পাঁচজন হলেন এএসপি সারোয়ার কবীর, এএসআই হাসিনুর রহমান, কনেস্টবল আহসান উল ফারুক, চালক হাবিবুর রহমান ও যার অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের অপহরণ করা হয় সেই ফসিহ উল আলম পলাশ।

বুধবার (২৫ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টায় সাদা মাইক্রোবাসে করে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে এএসপি সারোয়ার কবীরসহ পাঁচজনকে আদালতে নেওয়া হয়। দিনাজপুর আমলি আদালতের-৪-এর বিচারক শিশির কুমার বসু সন্ধ্যায় তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে অপহরণের শিকার মা ও ছেলেকে ছেড়ে দেওয়ারও আদেশ দেন আদালত।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী লুৎফর রহমানের ভাই খলিলুর রহমান বাদী হয়ে চিরিরবন্দর থানায় অপহরণ মামলা করেছেন। এ মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়।

জানা গেছে, ২৩ আগস্ট রাত ৯টায় চিরিরবন্দর উপজেলার নান্দেরাই গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে মা জহুরা বেগম (৪৬) ও ছেলে জাহাঙ্গীরকে (২৫) ডিবি পুলিশের পরিচয়ে মাইক্রোবাসযোগে অপহরণ করা হয়। এ সময় মা ও ছেলেকে মারপিটও করে অপহরণকারীরা। অপহরণকারীরা বলে, তারা জাহাঙ্গিরের বাবা লুৎফর রহমানকে ধরতে এসেছে, তার বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকা প্রতারণার মামলা আছে।

এরপর জহুরা বেগমের বাড়ির লোকজন র‌্যাব, ডিবি পুলিশসহ বিভিন্ন জায়গায় আটকের বিষয়ে খোঁজ নেন। কিন্তু কেউ আটকের বিষয়ে কিছু বলতে পারে না। পরে অপহরণকারীরা মোবাইলে লুৎফর রমান ও তার ভাই রমজানের কাছে প্রথমে ৫০ লাখ এবং পরে ১৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

পরদিন মঙ্গলবার মুক্তিপণের টাকা দিবেন বলে হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে যান লুৎফর রহমান ও রমজান আলী। সেখানে অপহরণকারীরা থাকার কথা। কিন্তু লুৎফরদের সঙ্গে সিভিল পোশাকে পুলিশ রয়েছে টের পেয়ে অপহরণকারীরা মাইক্রোবাস নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ তাদের তাড়া করে দশমাইল নামক স্থানে গিয়ে ধরে ফেলে। অভিযানে জেলা পুলিশ ও চিরিরবন্দর থানার পুলিশ অংশ নেয়।

সহকারী পুলিশ সুপার সারোয়ার কবির ও কনস্টেবল আহসানুল হক

আটকের পর পুলিশ জানতে পারে অপহরণকারীদের মধ্যে রংপুর জোনের সিআইডি পুলিশের এএসপি সারোয়ার কবীর, এএসআই হাসিনুর রহমান, কনেস্টবল আহসান উল ফারুক ও চালক হাবিবুর রয়েছেন।

এ ঘটনা জানাজানি হয় বুধবার সকালে। তখন অপহৃত মা জহুরা বেগম ও ছেলে জাহাঙ্গীরকে ডিবি অফিসে জিজ্ঞাবাদের জন্য আনা হয়।

রংপুর সিআইডির পুলিশ সুপার আতাউর রহমান জানান, অভিযুক্তরা কোনোপ্রকার অনুমতি না নিয়ে সেখানে (চিরিরবন্দর) গেছে। তাদের আটকের বিষয়টি শুনেছি। তারা কেন সেখানে গেছে, কাকে অপহরণ করেছে, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় খোঁজখবর নিয়ে তদন্ত স্বাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর সিআইডির কাছে পলাশ নামে এক ব্যক্তি চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলপুর ইউনিয়নের নান্দেরাই গ্রামের লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকার প্রতারণার অভিযোগ আনেন।

এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২৩ আগস্ট রাতে সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার সারোয়ার কবীর সোহাগ, এএসআই হাসিনুর রহমান ও কনস্টেবল আহসান উল ফারুক ও চালক হাবিবুব লুৎফরের বাড়িতে যান। তাকে না পেয়ে তার স্ত্রী ও ছেলেকে তুলে নিয়ে যান তারা।

এমএসআর/জেএস