ফরিদপুরে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ করা হবে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে। এখানে কারও কোনো সুপারিশ কাজ করবে না বলে জানিয়েছেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান।

রোববার (২২ আগস্ট) জেলা পুলিশের সম্মেলন কক্ষে বেলা ১১টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

কনস্টেবল নিয়োগে অস্বচ্ছতা ও বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য ১৩টি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জেলা পুলিশ। এ বিষয়টি তুলে ধরতে আয়োজন করা হয় এ সংবাদ সম্মেলনের।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন পুলিশ সুপার। নিয়োগ স্বচ্ছ করার জন্য যে ১৩টি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলো সম্পর্কে বলেন তিনি।

সেগুলো হলো, জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ডিজিটাল ডিভাইস এবং স্থানীয় কেবল অপারেটরের মাধ্যমে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের নতুন পদ্ধতি ও তথ্য প্রচার করা হবে। জেলা পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা, থানা, ফাঁড়ি ও তদন্ত কেন্দ্রের মাধ্যমে এবং অন্যান্য প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করে এ ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করা হবে। কোনো দালাল কিংবা প্রতারক চক্র যাতে চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে প্রতারণা করে চাকরি পাইয়ে দেয়ার নাম করে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিতে না পারে। এজন্য জেলা পুলিশ কঠোর মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করবে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দালাল প্রতারক কিংবা অসদুপায় অবলম্বনকারী চক্রের বিরুদ্ধে তথ্য সংগ্রহ পূর্বক কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দালাল, প্রতারক, অসদুপায় অবলম্বনকারীসহ তদবিরবাজ কিংবা অন্য যে কেউ যাতে চাকরি প্রার্থীদের প্রতারিত করতে না পারে এজন্য জেলা পুলিশের একাধিক টিমসহ গোয়েন্দা টিম সার্বক্ষণিক তথ্য সংগ্রহ ও মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকবেন। প্রতারকদের বিরুদ্ধে তথ্য পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এছাড়াও, চাকরি প্রার্থীদের পরিবারের অস্বাভাবিক ব্যাংক লেনদেন, জমিজমা ও মূল্যবান সম্পদ বিক্রয়, অর্থ লেনদেন ও ধারকর্জের যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে হবে। অভিভাবক চাকরি প্রার্থীদের সঙ্গে মেয়েকে বিবাহ বন্ধনের প্রতিশ্রুতিতে যৌতুক হিসেবে টাকাপয়সা প্রদান করে থাকেন যা প্রচলিত আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়টি পুলিশি নজরদারির মধ্যে রাখা হবে।

কোনো চাকরিপ্রত্যাশী কারো মাধ্যমে তদবির কিংবা অসাধু পন্থা অবলম্বন করলে সঙ্গে সঙ্গে ওই প্রার্থীকে অযোগ্য বলে বিবেচনা করা হবে এবং চাকরির  নিয়োগের যে কোনো পর্যায়ে দুর্নীতি প্রমাণিত হলে তার নিয়োগ বাতিল করে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে সব ধরনের অনৈতিক লেনদেন এবং অবৈধ তদবির বন্ধের জন্য ফরিদপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিট পুলিশিং, কমিউনিটি পুলিশিং, উঠান বৈঠক, অপরাধ দমন সভা, মসজিদ, মন্দির প্রভৃতি সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে।

পুলিশ নিয়োগ সংক্রান্ত কোথাও কোনো অনৈতিক লেনদেন অথবা কোন অবৈধ পন্থা গ্রহণের ঘটনার তথ্য কেউ পুলিশকে প্রদান করলে তাকে পুলিশের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হবে এবং তথ্য দাতার নাম পরিচয় গোপন রাখা হবে। পুলিশ নিয়োগ সংক্রান্ত অবৈধ লেনদেন কিংবা প্রতারক চক্রকে ধরার জন্য জেলা পুলিশের বিশেষ টিম সাদা পোশাকে জেলার বিভিন্নস্থানে নজরদারি করবে।

পুলিশ নিয়োগ সংক্রান্তে যে কোনো ধরনের অসাধু তৎপরতাকে প্রতিহত করার জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা নেয়া হবে এবং প্রযুক্তিগত মনিটরিং করা হবে।

তিনি জানান, ইতোমধ্যে জেলা পুলিশের তালিকাভুক্ত তদবিরবাজ ও দালালদের গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে এনে তাদের গতিবিধি নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে ।

এ সময় পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া সফল করার জন্য আগত সংবাদকর্মীদের সাহায্যও কামনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. তরিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) ফাহিমা কাদের চৌধুরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হেলালউদ্দিন, ডিবি পুলিশের ওসি সুণীল কর্মকারসহ সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

এমএএস