খুলে দেওয়া হয়েছে মৌলভীবাজার জেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতসহ বন বিভাগের সব পর্যটন কেন্দ্র। এরপর থেকেই ভিড় নামে পর্যটকদের। রোববার (২২ আগস্ট) সকাল থেকেই পর্যটকদের পদভারে মুখর হয়ে ওঠে এসব স্থান।

শুধু লাউয়াছড়াই নয়, পর্যটকরা সেখান থেকে দলবল নিয়ে যাচ্ছেন মাধবপুর লেক, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, বড়লেখার মাধবকুণ্ড, কমলগঞ্জের মাধবপুর লেকসহ বিভিন্ন চা-বাগান। সরকারিভাবে পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ার ঘোষণার পর‌ও বন্ধ ছিল মৌলভীবাজারের পর্যটন কেন্দ্রগুলো।

কিন্তু ২১ আগস্ট থেকে আবার পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। খুলে দেওয়ার পর পর্যটকদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি।

রোববার (২২ আগস্ট) সকাল থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে পর্যটকদের। কিন্তু প্রবেশদ্বার অতিক্রম করার পর অধিকাংশ পর্যটকের মুখে মাস্ক পাওয়া যায় না। ছবি তোলা কিংবা অক্সিজেন গ্রহণের জন্য তারা মাস্ক রাখছেন না মুখে।

তবে পর্যটকরা যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উদ্যানে চলাচল করেন, সে জন্য কাজ করছেন লাউয়াছড়া উদ্যানে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পর্যটন পুলিশ ও বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট লোকজন।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে সিলেটের বিয়ানীবাজার থেকে আসা ফাহমিদা নওশীন বলেন, দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থাকার পর প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য এসেছি। সবুজ এ বন ঘুরে সত্যিই ভালো লেগেছে।

কমলগঞ্জ জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সভাপতি মঞ্জুর আহমেদ আজাদ মান্না বলেন, করোনা মোকাবিলায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পর্যটকরা এখানে ভ্রমণ করলে তা নিরাপদ হবে।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পর্যটন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) নাছির উদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য পর্যটকদের বলা হচ্ছে। যাদের মুখে মাস্ক নেই, তাদের টিকিট কাউন্টার থেকে মাস্ক সংগ্রহ করে ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছি। পাশাপাশি পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করছে পুলিশ।

লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, সরকারি নির্দেশনার পর থেকে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। তবে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে আসা দর্শনার্থীদের করোনার বিধিনিষেধ মানাতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি আমরা। মুখে মাস্ক ও হেন্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের পর আমরা ভেতরে প্রবেশ করতে দিই।

এদিকে দীর্ঘদিন পর পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়ায় স্বস্তি বিরাজ করছে মৌলভীবাজারের পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মধ্যে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলে গড়ে ওঠা হোটেল-মোটেলগুলোর ব্যবসায় নেমে এসেছিল মন্দাভাব।

হোটেল প্যারাডাইজের মালিক আবুজার বাবলা বলেন, করোনার কারণে সরকারি নির্দেশে হোটেল বন্ধ রাখতে হয়েছে। নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে ৮ থেকে ১০ জন কর্মীর বেতন দিতে হয়েছে প্রতি মাসে। এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাব। স্বাস্থ্যবিধি ও প্রস্তুতির বিষয়ে তারা শতভাগ প্রস্তুতি নিয়েছি।

লাউয়াছড়া ইকো ট্যুরিস্ট গাইড অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. আহাদ মিয়া বলেন, করোনায় সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ থাকায় তারা প্রায় ২৫ জন গাইড কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন। তা ছাড়া সরকারের পক্ষ থেকেও তাদের এ দুঃসময়ে কোনো সহযোগিতা করা হয়নি। এখন পর্যটন কেন্দ্র খুলছে, অনেক পর্যটক ইতোমধ্যে যোগাযোগও করছেন।

পর্যটন সেবা সংস্থার সাংগঠনিক সম্পাদক এস কে দাশ সুমন বলেন, করোনাভাইরাসের ব্যাপকতায় স্থবির বিশ্ব অর্থনীতি। বাংলাদেশের পর্যটনেও রয়েছে এর বিস্তর প্রভাব। সমগ্র দেশের পর্যটনশিল্পের সঙ্গে চায়ের রাজধানীখ্যাত মৌলভীবাজার জেলার পর্যটনশিল্পও রীতিমতো স্থবির হয়ে পড়েছে।

এত দিন পর্যটক না আসায় একদিকে সরকার হারিয়েছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব, অন্যদিকে পর্যটননির্ভর জীবিকা নির্বাহকারী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হয়েছেন বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন। চাকরি হারিয়েছেন জেলার পর্যটনসংশ্লিষ্ট প্রায় ৭০ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এই শিল্প টিকিয়ে রাখা বর্তমান পরিস্থিতিতে অসম্ভব বলে আমরা মনে করি।

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বন বিভাগের সব পর্যটন কেন্দ্র দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দর্শনার্থীরা এসব স্থানে প্রবেশ করবেন।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন, সরকারি নির্দেশে সব পর্যটন কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে প্রয়োজনে পর্যটন কেন্দ্র আবার বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।

ওমর ফারুক নাঈম/এনএ