করোনাভাইরাসের প্রভাবে স্থবির হয়ে পড়া কুমিল্লার পর্যটনশিল্পে প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে প্রায় চার মাস বন্ধ থাকার পর স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘরসহ কুমিল্লার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে প্রথম দুই দিন দর্শনার্থীসংখ্যা কম থাকলেও বর্তমানে পর্যটকদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়।

সরেজমিনে শনিবার (২১ আগস্ট) কুমিল্লার শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘরসহ কুমিল্লার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোতে এমন চিত্রই দেখা যায়।

এদিকে বিনোদন কেন্দ্রের হোটেল-মোটেলগুলোও ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোর প্রবেশমুখে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি তদারকি কঠোরভাবে পালিত হচ্ছে। তবে ভেতরে প্রবেশের পর মাস্ক খুলে অনেকে পকেটে ঢুকিয়ে রাখছেন।

প্রাচীন ঐতিহ্য আর শিক্ষা-সংস্কৃতির নগরখ্যাত কুমিল্লার পর্যটনশিল্প দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে অনেক পর্যটক আসেন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শুধু শালবন বিহার ও ময়নামতি জাদুঘর থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ১ কোটি ২২ লাখ টাকা। তবে করোনার প্রকোপ বাড়ায় গত ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ৫৫ লাখে নেমে এসেছে।

পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের স্থান কুমিল্লা জনপ্রিয় ম্যাজিক প্যারাডাইস। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, খুব কমসংখ্যক দর্শনার্থী রয়েছেন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় অনেক মূল্যবান রাইড নষ্ট হয়ে গেছে। নিষেধাজ্ঞা তুলে পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেওয়ায় সংশ্লিষ্টরা সন্তুষ্ট হলেও পরবর্তী লকডাউন আসছে কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। ভয়ে আছেন ফের লকডাউন হলে লোকসানের পরিধি বাড়বে ভেবে।

এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সহজ শর্তে ঋণ ও সরকার সার্ভিস চার্জ গ্রহণে সহনীয় হলে করোনার প্রভাবে বিপর্যয়ে পড়া পর্যটনশিল্প লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবে।

সিলেটের শ্রীমঙ্গল থেকে প্রথমবারের মতো কুমিল্লার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান শালবন বিহারে ঘুরতে এসেছেন মৌ। তিনি বলেন, লকডাউনে দীর্ঘদিন ঘরে বসে থেকে আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। তাই বিনোদন কেন্দ্রগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেওয়ায় আমাদের জন্য অনেক ভালো হয়েছে। পরিবার নিয়ে দৃষ্টিনন্দন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলো দেখতে পেয়ে খুব ভালো লাগছে।

ঢাকা থেকে মা-বাবার সঙ্গে ঘুরেতে এসেছে প্রথম শ্রেণির ছাত্রী আকিফা আননূর আরিয়া। করোনার প্রভাবে স্কুল বন্ধ রয়েছে। আরিয়া বলেন, আমি অনেক দিন ঘরে বন্দি ছিলাম। তাই মা-বাবা আমাকে ঘোরাতে নিয়ে এসেছে।

দর্শনার্থী পিয়াস বলেন, নোয়াখালী থেকে দীর্ঘদিন পর আমার প্রিয় স্থান কুমিল্লার ম্যাজিক প্যারাডাইস ঘুরতে এসেছি। এত দিন ঘরবন্দি ছিলাম। দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ ও রাইড চড়ে মনটা অনেক তরতাজা হয়েছে।

ম্যাজিক প্যারাডাইসের সিওও আলিমুল ইসলাম বলেন, পাঁচ মাস পর সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে ম্যাজিক প্যারাডাইস। আগত দর্শনার্থীদের মাস্ক ফ্রি দিচ্ছি, সেই সঙ্গে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে জীবাণুমুক্ত করছি। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক সব স্বাস্থ্যবিধি আমরা পালন করছি। সবাইকে সচেতন হতে হবে।

কুমিল্লার ময়নামতি জাদুঘর ও শালবন বিহারের কাস্টোডিয়ান মো. হাসিবুল হাসান সুমি বলেন, পর্যটক ও দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি কঠোরভাবে তদারক করা হচ্ছে। ধারণক্ষমতার অর্ধেকের বেশি প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। টিকিট কাউন্টারেও তদারক করা হচ্ছে, যাতে কেউ প্রবেশের সময় স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করতে না পারেন।

এনএ