বরিশালে হামলা-সংঘর্ষ
মেয়রের মামলা প্রত্যাহার না হলে বিভাগজুড়ে কঠোর কর্মসূচি
বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ওপর গুলি বর্ষণ ও মামলা দায়েরের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বরিশাল বিভাগের ২৬ পৌর মেয়র ও ৪২ উপজেলা চেয়ারম্যান।
শনিবার (২১ আগস্ট) বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বরিশাল ক্লাবের হল রুমে পৃথক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলন থেকে বুধবারের (১৮ আগস্ট) রাতের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানানো হয়। একই সঙ্গে বরিশালের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএসএ) বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিভাগের সকল পৌরসভা ও উপজেলায় আন্দোলন শুরু করা হবে বলেও ঘোষণা দেন।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে সকল পৌর মেয়রদের পক্ষে গৌরনদী পৌরসভার মেয়র হারিছুর রহমান হারিছ এবং উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে গৌরনদী উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন্নাহার মেরী লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়র হারিছুর রহমান বলেন, ১৮ আগস্ট রাত সাড়ে ৮টায় বরিশাল সদর উপজেলা কমপ্লেক্সে নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক বরিশাল সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাজে বাধা দান ও গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। মেয়র উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্যে উপজেলা কমপ্লেক্সের মূল গেট অতিক্রমকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে লক্ষ্য করে গুলি করে। তাৎক্ষণিক সেখানে উপস্থিত দলীয় নেতাকর্মীরা মানবপ্রাচীর তৈরি করে মেয়রকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে তার বাসভবনে পাঠিয়ে দেন।
মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে গুলি করার খবর মুহূর্তে নগরব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীরা উপজেলা পরিষদের গেটের সামনে জড়ো হয়। তখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে পুনরায় অবিরাম গুলি বর্ষণ করতে থাকে।
এতে গুলিবিদ্ধ হয় বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ ও বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন, মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জিয়াউর রহমান জিয়া, সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসসহ আরও ৬০-৭০ জন। আহতরা চিকিৎসার জন্য শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার প্রাক্কালে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রায় ২০০ দাঙ্গা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বেধড়ক লাঠিচার্জ শুরু করে। ফলে আরও প্রায় ৫০ জনের মত নেতাকর্মী মারাত্মকভাবে জখম হয়।
হারিছুর রহমান হারিছ বলেন, আমরা বিস্মিত হয়ে যাই যে, বরিশাল পুলিশ এবং স্বেচ্ছাচারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ ১৯ আগস্ট কোতোয়ালি মডেল থানায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে ১ নম্বর আসামি করে ২টি মামলা দায়ের করেন। যা দক্ষিণাঞ্চলবাসীর জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। শোকাবহ আগস্টের ভাবগাম্ভীর্যতা ও মর্যাদা রক্ষায় আমরা এই নিন্দনীয় ঘটনার কোনো প্রতিবাদ, বিক্ষোভে যেতে পারছি না। কিন্তু আমরা আজকের সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
আমরা দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে করা ২টি মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। স্বেচ্ছাচারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অপসারণ করতে হবে এবং আমরা এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় শোকাবহ আগস্ট শেষে আমরা আমাদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবো।
অন্যদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন্নাহার মেরী বলেন, আপনারা জানেন ইউএনও মুনিবুর রহমান এর আগে কলাপাড়া উপজেলায় মানুষকে মারধর, নির্যাতন করেছেন। তার বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ। জনগণের তোপের মুখে পড়ে কলাপাড়া ছেড়ে বরিশালে এসেও একইভাবে আচরণ শুরু করেছেন। মুনিবুর রহমান যে অত্যন্ত বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন তার প্রমাণ বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ওপর গুলিবর্ষণ। এছাড়া এ ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিএএসএ) যে বক্তব্য দিয়েছে তা প্রশাসনের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে বিদ্যমান সুসর্ম্পকের অবনতি ঘটাবে। এই বিবৃতি প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিবে। এজন্য তাদের বিবৃতি প্রত্যাহার করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার রাতে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় ৬০২ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহসহ ৬০২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর