২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে লিটন মুন্সীর বাবা-মা এখন নিঃস্ব। পুরোনো ঘরের চালা দিয়ে পানি পড়ে। সহায়-সম্বল বলতে কিছুই নেই। রোগ-শোকে আক্রান্ত হয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটছে তাদের।   

লিটন মুন্সী মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের উত্তর হোসেনপুর গ্রামের আইয়ুব আলী মুন্সীর ছেলে। আওয়ামী লীগের মিটিং মিছিলে তার সরব উপস্থিতি ছিল। তিনি ছিলেন দলের নিবেদিত কর্মী।

এই টানেই লিটন সেদিন সমাবেশে যোগ দিতে ঢাকা গিয়েছিলেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে শেখ হাসিনার সমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় নিহত হন তিনি। লিটনের পরিবারে শোকের ছায়া এখনো কাটেনি। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।

তবে তিন বছর ধরে কেউ খবর নেয়নি তার বাবা-মায়ের। এখন রোগে-শোকে অসহায় জীবন-যাপন করছেন বৃদ্ধ মা-বাবা। পুরোনো ঘরের চালা দিয়ে পানি পড়ে। সহায় সম্বল জমি-জমা কিছুই নেই তাদের।

জানা গেছে, লিটন মারা যাওয়ার তিন বছর পর তার স্ত্রী মাফিয়া এক প্রবাসীকে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি থাকেন। সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে একমাত্র মেয়ে মিথিলা মোটামুটি আছে।

লিটনের মা আছিয়া বেগম বলেন, ‘আমার বাবা (লিটন মুন্সী) বলেছিল পুরোনো ঘর মেরামত করার দরকার নেই। আমি বিল্ডিং দেবো। কিন্তু সেটা আর হয়নি। পুরোনো ঘরেই থাকি। ঘরের চাল দিয়ে পানি পড়ে। প্রধানমন্ত্রী যদি আমাদের গ্রামের বাড়িতে একটি ঘর নির্মাণ করে দেন তাহলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভালোভাবে থাকতে পারব। আমরা দুজনই অসুস্থ। প্রতি মাসে আমাদের ৫-৬ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। এসব টাকা পাব কোথায়?’ শুনেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালে লিটনের মেয়ে মিথিলার নামে ঢাকায় একটি ফ্লাট বাড়ি এবং ৫ লাখ টাকা দিয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিমাসে তার খরচ বাবদ পাঁচ হাজার করে টাকা দেন। মিথিলা মাদারীপুর থাকে। মাঝে মাঝে আমাদের কাছে ফোন করে।

লিটনের বাবা আইয়ুব আলী মুন্সী বলেন, আমার ছেলের তো কোনো দোষ ছিল না। একমাত্র ছেলেকে কবরে শুইয়ে কীভাবে বেঁচে আছি বলতে পারেন? সরকারিভাবে পাঁচ লাখ টাকা পেয়েছিলাম। চিকিৎসা করতে সে টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন মাসে ৩ হাজার টাকা করে সরকারি ভাতা পাই। এতে আমাদের সংসার চলে না।

নিহত লিটন মুন্সীর মেয়ে নুসরাত জাহান মিথিলা বলেন, বাবা যখন মারা যান তখন আমি খুবই ছোট। বাবা কি জিনিস তা বুঝতে পারিনি। বাবার আদর পাওয়ার আগেই বাবাকে হারিয়েছি। হামলার ঘটনায় অপরাধীদের বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর হলেই আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে।

মিথিলার মা মাফিয়া বেগম জানান, মিথিলা এখন মাদারীপুর ডনোভান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। যোগ্য হলে তার একটি চাকরির ব্যবস্থাসহ গ্রেনেড হামলাকারীদের শাস্তির রায় কার্যকর করার দাবি জানান তিনি।

এসপি