করোনার বিধিনিষেধ তুলে নিতেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা কিশোরগঞ্জের নিকলী বেড়িবাঁধ হাওর পর্যটন এলাকায় পর্যটনপ্রেমীদের ঢল নেমেছে। সাগরের মতো থইথই জলরাশির অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগে চলছে হাজারো পর্যটকের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস।

এমন পরিস্থিতিতে বেজায় খুশি পর্যটনশিল্পসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও জীবিকা নির্বাহকারী লোকজন।

জানা গেছে, ২০০০ সালের দিকে কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর উপজেলা নিকলী উপজেলা সদরকে বর্ষার প্রচণ্ড ঢেউয়ের কবল থেকে রক্ষায় সরকার পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বেড়িবাঁধ তৈরি করে। একই সময় ভাঙনপ্রবণ উপজেলার ছাতিরচর গ্রাম রক্ষায় রোপণ করা হয় হাজারো করচগাছ।

এ দৃষ্টিনন্দন দীর্ঘ বেড়িবাঁধ ভাসমান পানিসহিষ্ণু করচবন এবং সাগরের ন্যায় বর্ষার দিগন্তবিস্তৃত জলরাশি ‌‌'সি বিচ'র মতো রূপ ধারণ করে।

অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বর্ষার দিগন্তবিস্তৃত এ হাওর জলাভূমির ভিডিও চিত্র মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে তিন-চার বছর ধরে ভ্রমণবিলাসী ও সৌন্দর্যপ্রেমিক পর্যটকদের ঢল নামে এই হাওর এলাকায়।


রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকরা দল বেঁধে শত শত মোটরবাইক নিয়ে এবং দামি প্রাইভেট কার, মাইক্রো ও বাস হাঁকিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়েও বর্ষায় ছুটে আসেন এ পর্যটন এলাকায়।

এসব পর্যটক টায়ার-টিউব নিয়ে জলকেলি, নৌকা ও স্পিডবোটে দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশিতে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি বিস্তীর্ণ হাওরের বুকে ভাসমান করচবনের শীতল ছায়ায় প্রিয়জনদের নিয়ে মেতে ওঠেন ভিন্ন রকম আনন্দে।

কোনো কোনো পর্যটক দল নৌকায় ঘুরে ঘুরে হাওর জলরাশির অপার সৌন্দর্য এবং স্রোতের গর্জন আর পানির ছলাৎ ছলাৎ ও কলকল ধ্বনি উপভোগ করে রাত পর্যন্ত গুজরান করেন।

করোনার কারণে সোশ্যাল ট্রান্সমিশন-ভীতির কারণে হাওর ভ্রমণে পুরোপুরি পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।

নরসিংদী থেকে থেকে নিকলী হাওর দেখতে আসা রবিউল ইসলাম বলেন, বর্ষার শুরুতেই পরিকল্পনা ছিল এবার নিকলী হাওরে ঘুরতে আসব। এতদিন করোনার কারণে হাওর পর্যটন বন্ধ থাকার কারণে আসতে পারিনি। হাওর পর্যটন খুলে দেওয়ায় ৬টি বাইকে করে ১২ জন বন্ধু এসছি।

তবে কিছু অসাধু লোক মানুষকে জিম্মি করে বেশি টাকা আদায় করছে। যা মোটেও শোভনীয় নয়। হাওরপ্রিয় দর্শনার্থীদের স্বার্থে প্রশাসনের এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

গাজীপুর থেকে আসা শাকিলা ফরাজান বলেন, হাওরের সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এখানে আসলে যতই মন খারাপ থাকুক না কেন, মন ভালো হতে বাধ্য। তবে এখানে নিরাপত্তাব্যবস্থা ভালো না থাকায় সন্ধ্যার পর বা রাতে অনেকেই ছিনতাইকারীর কবলে পড়ছেন। হাওর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পর্যটকদের নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি করছি।

পর্যটক নিয়ে হাওরে ঘুরতে যাওয়া নৌকার মালিক হাসেম আলী জানান, এত দিন ধরে করোনার কারণে বন্ধ থাকার পর হাওর খুলে দেওয়ায় মানুষ আসতে শুরু করেছে। আমার তো বর্ষার সময় পর্যটক আসার অপেক্ষায় নৌকাগুলো সাজিয়ে থাকি। অনেক মানুষ নতুন করে নৌকা ও ট্রলার তৈরি করে অনেক টাকা খরচ করে। এখন যেহেতু খুলে দেওয়া হয়েছে, তাই আমরা অনেক খুশি।

নিকলী উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) কর্মকর্তা মো. আসসাদিকজামান ঢাকা পোস্টকে জানান, সরকারি বিধি মেনেই পর্যটকদের হাওরে ভ্রমণ করতে হবে। বিধি না মানলে জরিমানা গুনতে হবে। এ ছাড়া পর্যটকটের নিরাপত্তায় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকটি টিম কাজ করছে।

এসকে রাসেল/এনএ