খুলেছে পর্যটনের দুয়ার, বহুদিন পর পর্যটকদের উপস্থিতিতে সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ লেকসহ (নীলাদ্রি লেক) সীমান্তের পর্যটন স্পটগুলোর নীরবতা ভেঙেছে। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় বৃহস্পতিবারই অসংখ্য ভ্রমণপিপাসু ভিড় করেছেন সুনামগঞ্জ সীমান্তের প্রকৃতির লীলাভূমিতে।

রূপে-গুণে অনন্য টাঙ্গুয়ার হাওর। পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। প্রাকৃতিক বন, পরিযায়ী ও দেশি পাখির নিরাপদ আবাসস্থলও এটি। দেশের অন্যতম সুন্দর ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ সম্ভাবনাময় একটি জলাভূমি। অপার সৌন্দর্যের টাঙ্গুয়ার হাওর ১৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হাওরের সম্পদ রক্ষা ও সংরক্ষণে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি রয়েছে বেসরকারি উদ্যোগও।

সুনামগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার বিশাল এলাকা নিয়ে এই হাওরের অবস্থান। দুটি উপজেলার ৪ ইউনিয়নের ১৮টি মৌজা মিলে হাওরের আয়তন ১২ হাজার ৬৫৫ হেক্টর। হাওরে ছোট-বড় ১০৯টি বিল আছে। তবে প্রধান বিল ৫৪টি। হাওরের ভেতরে জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য খাল ও নালা। বর্ষায় সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। ওই সময় হাওর রূপ নেয় সমুদ্রে।

হাওর এলাকার ৮৮টি গ্রামের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ হাওরের ওপর নির্ভরশীল। হাওরের উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড়। এই পাহাড় থেকে ৩৮টি ঝরনা নেমে এসে মিশেছে টাঙ্গুয়ার হাওরে।

হাওরে ঘুরে বেড়াতে এখন বেশ ভালো সুযোগ-সুবিধা রয়েছে পর্যটকদের জন্য। এই মৌসুমে ভাড়ায় মিলে বেশ কিছু ছোট-বড় নৌকা। এসব নৌকায় রয়েছে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা।

টাঙ্গুয়ার হাওরে যাওয়ার একাধিক প্রবেশপথ আছে। যারা তাহিরপুরের লাউড়েরগড় হয়ে যাবেন, তাদের জন্য বাড়তি পাওয়া আছে। এই পথে আছে পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা অপরূপা যাদুকাটা ও শহীদ সিরাজ লেক, আছে শিমুল বাগানও।

দীর্ঘদিন পর বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) পর্যটনের দুয়ার খুলে দেওয়ায় বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস নিয়ে বিভিন্ন পথেই টাঙ্গুয়ার হাওরসহ সীমান্তের পর্যটন স্পটে ঢুকেছেন পর্যটকরা।

শহীদ সিরাজ লেক এ আসা সিলেটের টিলাগড়ের শুভাসিস দাস বলেন, প্রকৃতির সৌহার্দ্য ভরা স্থানটিতে এসে মুগ্ধ হয়েছি। অনেক দিন ধরেই আসার চেষ্টা করেছিলাম, লকডাউন থাকায় আসা হয়নি। সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে বৃহস্পতিবার থেকে পর্যটনের দুয়ার খুলে দেওয়ায় দলে দলে প্রকৃতিপ্রেমীরা এখানে এসেছেন। একই ধরনের মন্তব্য করেন নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা অনিক রহমান ও সিমি রহমান।

ভাটি তাহিরপুরের রহমান বাবুর্চি বললেন, পর্যটক কম আসায় রান্না করার জন্য অনেক দিন ট্রলারে যাওয়া হয়নি। আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে কয়েক দল পর্যটক যোগাযোগ করেছেন তাদের সঙ্গে ট্রলারে রান্না করে দেওয়ার জন্য যেতে। তিনি জানান, বুধবারেই পর্যটকদের ট্রলার ‘আবিদা-এ-তাহা টাঙ্গুয়া প্রমোদতরি, সাম্পান, পানসি ও টাঙ্গুয়া এক্সপ্রেস তিন দিনের জন্য ভাড়া হয়ে গেছে।

জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, জেলার ব্রাডিং বুক নতুনভাবে সংস্করণ করা হয়েছে। পর্যটনের সম্ভাবনাকে প্রাধান্য দিয়ে আগামী তিন বছর আমরা কী কী কাজ করব, এর রূপরেখা প্রণয়ন করছি। টাঙ্গুয়ার হাওরকে কেন্দ্র ধরে শহীদ সিরাজ লেক, বারেকের টিলা, শিমুলবাগান এলাকার পর্যটনবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার কাজ করা হবে। শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের নিয়ে আমরা গাইড দল করব। পর্যটকরা সুনামগঞ্জে এসে ঐতিহ্য জাদুঘর, হাসনরাজা মিউজিয়াম, পুরাতন সার্কিট হাউস দেখে তাহিরপুরে যাবেন, কেউ বাউল সম্রাট শাহ্ আব্দুল করিমের দিরাইয়ের উজানধলের বাড়িতে যেতে চাইলে সেখানেও যেতে পারবেন।

তিনি বলেন, জেলার পর্যটন বিকাশে কীভাবে কী করা প্রয়োজন, তা দেখার জন্য শুক্রবার সরেজমিনে আসবেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সচিব, পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান এবং টুরিজম বোর্ডের চেয়ারম্যান। সুনামগঞ্জের পর্যটনের বিকাশের জন্য কোথায় কী করতে হবে সরেজমিনে দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন তারা।

সাইদুর রহমান আসাদ/এনএ