মহামারির কারণে সাড়ে চার মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) খুলেছে পর্যটন কেন্দ্রের দুয়ার। খুলে দেওয়া হলো হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্টসহ পর্যটন এলাকার বিনোদন কেন্দ্রগুলোও। এতে সারাদেশের মতো পাহাড়ি জেলা বান্দরবান পর্যটনশিল্প-সংশ্লিষ্টদের মাঝেও স্বস্তি ফিরে এসেছে।

আশা করা হয়েছিল আজ থেকেই মুখর হবে পাহাড়ের পর্যটন, গতি আসবে সংশ্লিষ্টদের জীবন-জীবিকায়। তবে তেমন পর্যটকের দেখা মেলেনি।

বান্দরবানের নীলাচল, মেঘলা, চিম্বুক, নীল দিগন্ত, নীলগিরি, বগালেকসহ অর্ধশত পর্যটন কেন্দ্রে অল্পসংখ্যক পর্যটক আসতে দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) সকাল থেকেই পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় আসতে শুরু করেছেন পর্যটকরা। অন্যদিকে জেলা শহরের হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টগুলোতে পর্যটকরা বুকিং দিতে শুরু করেছেন।

বান্দরবান হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন লকডাউনের কারণে পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় তারা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন। হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলো থেকে অর্ধেক সংখ্যক কর্মচারী ছাঁটাই করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যারা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন বা পর্যটন খাতের উদ্যোক্তা, তারা মারাত্মক সমস্যায় পড়েছেন। তবে পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়ায় ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে উঠতে পারবেন।

বান্দরবানে জোভি গেস্ট হাউসের মালিক জাফর আলম বলেন, আজ থেকে পর্যটক আসতে শুরু করেছেন। তবে আশানুরূপ পর্যটকের দেখা মেলেনি। হোটেলে ৩০টি রুমের মধ্য ৪টি রুমে মানুষ রয়েছে মাত্র। শুধু পর্যটকদের জন্য নভেম্বর মাস পর্যন্ত ৩০ শতাংশ ডিসকাউন্ট চলবে।

নিলাচলে ঘুরতে আসা রাফিয়া রহমান জানান, একদম শহরে থেকে পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় মানুষ নেই বললে চলে। অথচ একসময় হাজারো লোকে মুখর থাকত জায়গাটি। আজ ১৫ থেকে ২০ জন ছাড়া তেমন কোনো পর্যটক নেই।

এদিকে শহরের পর্যটকনির্ভর বার্মিজ মার্কেট ও স্থানীয় পাহাড়িদের তৈজসপত্রের বাজারও আস্তে আস্তে মানুষ আসতে শুরু করেছে। দূরপাল্লার পরিবহনগুলো দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অল্পসংখ্যক পর্যটক আসতে শুরু করেছেন পাহাড়ি জেলা বান্দরবানে।

বার্মিজ মার্কেটের ব্যবসায়ী নাছির আলম বলেন, সকাল থেকে কোনো পর্যটকের দেখা পাইনি। এখনো আসছে না। গত দেড় বছরে হতাশ হওয়া ছাড়া আর কিছুই ছিল না। তবু আশায় আছি, হয়তো কিছুদিন পর পর্যটক বাড়তে পারে।

বান্দরবান ট্যুরিস্ট পুলিশ পরিদর্শক আমিনুল হক জানান, হোটেল, মোটেল, রিসোর্টগুলোয় ৫০ শতাংশ পর্যটক রাখতে বলা হয়েছে। সে বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য আমরা কাজ করছি। আর পর্যটনস্পটগুলোয় নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে।

গত বছরের মার্চে করোনার প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর থেকেই ধুঁকছে দেশের পর্যটনশিল্প। ওই বছরের শেষ দিকে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে কিছুটা সমাগম বাড়লেও চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে ফের বন্ধ করে দেয় সরকার। এরপর থেকে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে পাহাড়ি এলাকা। এতে হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীদের ক্ষতি দাঁড়িয়েছে শত কোটি টাকা। পুঁজি হারিয়ে অনেকেই এখন প্রায় নিঃস্ব।

জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি জানান, পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং অর্ধেক সংখ্যক পর্যটককে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া হোটেল-মোটেল রিসোর্টগুলোতেও অর্ধেক সংখ্যক আসন বরাদ্দ দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রিজভী রাহাত/এনএ