অভিমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতার পদত্যাগ
সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠনে পরামর্শ না নেওয়ায় অভিমানে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন দলের কেন্দ্রীয় সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামান। বুধবার (১৮ আগস্ট) রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বরাবর তিনি পদত্যাগপত্র পাঠান।
এ সময় সিলেট নগরের একটি অফিসে সংবাদ সম্মেলন করেন শামসুজ্জামান জামান। তিনি বলেন, আমি ১৯৮৫ সাল থেকে ছাত্র রাজনীতির মাধ্যমে বিএনপিতে যুক্ত। বিএনপির দুর্দিনে এই দলকে প্রতিষ্ঠা করতে সাধ্যমত সময় ও অর্থ ব্যয় করেছি। সীমাহীন প্রতিকূলতার মাঝে দলকে প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করেছি। আমি কখনোই হালুয়া রুটির ভাগিদার হইনি। কিংবা অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করিনি।
বিজ্ঞাপন
দলের মহাসচিবকে উদ্দেশ করে জামান বলেন, আপনার মত বিজ্ঞ মানুষের স্মরণশক্তি যদি মহান আল্লাহ সঠিক রাখেন তাহলে বিগত আন্দোলন সংগ্রামে আমার ও আমার সহযোদ্ধাদের ভূমিকা আপনার মনে থাকার কথা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হল গত ১৭ আগস্ট সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-স্বেচ্ছাসেবক সম্পাদক হওয়া সত্ত্বেও আমার জেলা ও মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হলো আমার মতামত ও পরামর্শ উপেক্ষা করে। সর্বোপরি যেসব সহযোদ্ধা আন্দোলন করতে গিয়ে জীবন বাজি রেখেছিল, গুলিবিদ্ধ হয়েছিল, এমনকি সমাজ, সংসার থেকে বিতাড়িত হয়েছিল, তাদেরকে চরমভাবে উপেক্ষা করে উপহাসের পাত্রে পরিণত করা হলো।
তিনি আরও বলেন, আজকে অত্যন্ত ব্যথিত চিত্তে জানতে ইচ্ছে করে আপনার দলে নেতৃত্ব পেতে হলে যোগ্যতার মাপকাঠিটা কী? যারা দেশ ও দলকে ভালোবাসে, জীবন বাজি রাখে, দুর্দিনে যারা বিশ্বস্ত থাকে, বন্দুকের সামনে বুক চেতিয়ে দাঁড়ায় তাদের পাওয়া উচিত, নাকি যারা লবিং-তদবির অথবা বিশেষ ব্যবস্থায় সব কিছু হাসিল করে তাদের পাওয়া উচিত?
বিএনপি নেতা জামান বলেন, যে দলটাকে ভালোবেসে তিল তিল করে বিনির্মাণ করেছিলাম আজকে সেই দলে আমরাই অনাহুত। আপনারা প্রায়ই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেন, রাষ্ট্রের কাছে ন্যায় ইনসাফের দাবি তোলেন। কিন্তু নিজের অন্তর-আত্মাকে একবার জিজ্ঞেস করে দেখবেন কি- আপনারা আপনাদের নিজেদের কর্মীদের মাঝে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন কিনা?
তিনি আরও বলেন, বিগত ৩৬টি বছর আপনার দলকে নিরলস সেবা দিয়ে গেছি। হযরত শাহজালাল (রহ.) এর পূণ্যভূমির মানুষ জানে- আমরা কতটা দুঃখের সাগর পাড়ি দিয়েছি। আজকে আমার সহযোদ্ধাদের প্রতি যে অন্যায় আচরণ আপনারা করলেন অবশ্যই প্রকৃতি এর প্রতিবিধান করবে বলে আমার বিশ্বাস। আমার জীবনের ৩৬টি বছর আপনাদেরকে সদকা হিসেবে দান করে দিলাম বলে বলেও উল্লেখ করেন বিএনপির এই নেতা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সহক্ষুদ্র ও ঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন লস্কর, ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, মওদুদুল হক, আব্দুর রকিব তুহিন, প্রভাষক রায়হান উদ্দিন, ফয়েজ আহমদ দৌলত প্রমুখ।
এর আগে মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) রাতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। দুই কমিটির প্রত্যেকটিতে ৬১ জন করে মোট ১২২ জন নেতা স্থান পেয়েছেন।
কমিটির জেলা শাখায় আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন আব্দুল আহাদ খান জামাল ও সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক ছাত্র নেতা দেওয়ান জাকির হোসেন খান। এছাড়া মহানগরের আহ্বায়ক হিসেবে আব্দুল ওয়াহিদ সুহেল ও সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন আজিজুল হোসেন আজিজ।
তুহিন আহমদ/আরএআর